প্রতিষ্ঠার দুই বছরে বশেফমুবিপ্রবি

প্রকাশিতঃ 11:03 am | November 21, 2019

মুহাম্মাদ হিজবুল্লাহ ::

শিক্ষা আলোকবর্তিকা স্বরূপ। শিক্ষা উন্নয়নের সোপান। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষিত কোনো জাতি অনুন্নত বা পশ্চাৎপদ থেকেছে এমন নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।

শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা একজন শিক্ষার্থীকে, তার পরিবেশ-প্রতিবেশ, মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহত্যি, কৃষ্টি, শিল্পকলা, দেশ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মানুষের জীবন সংগ্রাম, মানব সভ্যতা ইত্যাদি সর্ম্পকে জানার সুযোগ করে দেয়। করে তুলে সমাজ সচেতন ও সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে।

এর জন্য থাকা চাই সুশিক্ষা বা সত্যিকারের শিক্ষা। আর সুশিক্ষার মূলে থাকে দেশ, মানুষ ও মানবকল্যাণ। এক্ষেত্রে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।

পাকিস্তানি শাসনামলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, মানবকল্যাণকামী ও অসাম্প্রদায়কি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয় বাঙলার আপামর জরনতা। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীন বাংলাদশেরে স্বপ্নই দেখেননি তিনি একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সুখী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।

অর্থাৎ দক্ষ, যোগ্য, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক, আধুনিক, শিক্ষিত সন্তান বা মানবসম্পদ। আর তা সৃষ্টির জন্য থাকা চাই সত্যিকার মানুষ গড়ার শিক্ষা বা সুশিক্ষা।

সেই সুশিক্ষা দিতেই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেফমুবিপ্রবি)।

২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনটি পাস হওয়ার পর এ বিদ্যাপীঠ সীমিত সম্পদের মধ্যেই অদম্য শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসী কর্মীদের নিয়ে এগিয়ে চলছে।

জামালপুরের মেলান্দহে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে এখন শিক্ষাকার্যক্রম চলছে জেলা সদরের দেওয়ানপাড়ায়, বঙ্গবন্ধু আইডিয়াল কলেজের একটি ভবনে।

এরই মাঝে প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ব্যাচে চারটি বিভাগে ১৩৬জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষাকার্যক্রমের পাশাপাশি তাদের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে যা যা করণীয় সবই করা হচ্ছে। ছোট আকারে হলেও দেশি-বিদেশি লেখক ও গবেষকদের বইয়ের সমাহার রয়েছে লাইব্রেরিতে।

স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব। এতে ফ্রি ইন্টারনেট সেবাসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণও সংগ্রহ করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।

শূন্যে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানকে এই পর্যায়ে নেওয়ার কারিগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর একবছর পূর্তিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ।

সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খন্দকার হামিদুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান।

এ সময় ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপদানের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের সবাইকে। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের প্রতি; যিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং করছেন।

২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে। পরে গতবছরের ১৮ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদকে বশেফমুবিপ্রবির উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ।

এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেন প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ।

প্রথম ব্যাচে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে চারটি অনুষদে চারটি বিভাগের শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। বিভাগগুলো হচ্ছে- কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, গণিত, ব্যবস্থাপনা ও সমাজকর্ম। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রকৌশল অনুষদের অধীনে নতুন বিভাগ ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং চালু করা হয়েছে।

২৯ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর মডেল সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তিন শিফটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

লেখক: বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email