কৃষকের প্রতিশোধ নিচ্ছে পেঁয়াজ!

প্রকাশিতঃ 11:10 am | November 19, 2019

হৃদয় আলমঃঃ

দ্বিশতক হাঁকিয়েও অপরাজিত রয়েছে পেঁয়াজ। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।

সে হিসাবে শুধু এক সপ্তাহের ব্যবধানে রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এ মসলা জাতীয় পণ্যটির দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে ৯৫ টাকা।

পেঁয়াজ এখন টক অব দ্যা ক্যান্টি। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেউই পিছিয়ে নেই পেঁয়াজের আলোচনায়। আর খবরের পাতাগুলোর তো রীতিমতো প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে ‘পেঁয়াজের ঝাঁঝ’। সংসদেও অল্প-বিস্তর আলোচনা হয়েছে পেঁয়াজ দর নিয়ে। অনেক ব্যাচেলরই এরই মধ্যে খরচ বাঁচাতে পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়েছে।

বাদ যাননি হোটেলওয়ালারাও। অনেক হোটেলে বন্ধ হয়েছে পেঁয়াজু বা ছোলার মতো সুস্বাদু খাবার। তাদের দাবি, এসবে পেঁয়াজ লাগে প্রচুর। ভিক্ষুকরা তো ভিক্ষা হিসেবে রীতিমতো পেঁয়াজ দাবি করে বসেছেন।

তাছাড়া অনেকে আবার ব্যবসার প্রচারণা হিসেবে ব্যবহার করছেন এই সুযোগ। কোনো কোনো জায়গায় নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক বাজার করলেই মিলছে কম দামে পেঁয়াজ। কোথাও আবার বই বা অন্যান্য উপকরণের সাথে ফ্রি দেওয়া হচ্ছে পেঁয়াজ।

এই যখন অবস্থা তখন পিছিয়ে নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও। ফেসবুক থেকে শুরু করে টুইটার সব এখন পেঁয়াজারণ্য। পেঁয়াজ যখন আলোচনায় তখন কেউ কেউ একে পূর্ব-পরিকল্পনার অভাব বলে দাবি করছেন। কারো মতে আবার নির্দিষ্ট কোনো চক্রের কারসাজি এটা।

কিন্তু আমার দৃষ্টিতে ‘কৃষকের অবহেলার প্রতিশোধ নিচ্ছে পেঁয়াজ’। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে দেশে। মৌসুমে এমনিতেই পেঁয়াজের দাম কম থাকে তার ওপরে আরো পেঁয়াজ আনায় পানির দরে নিজেদের পরিশ্রমের ফসল বেঁচতে হয় কৃষকদের। অনেক সময় চাষাবাদের খরচও ওঠে না। এতে তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। যার ফলে পেঁয়াজ চাষ ছাড়ছেন অনেক কৃষক। পেশা বদল করছেন কেউ কেউ। কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মানুষের সংখ্যাও দিন কমছে।

সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে দেশে বর্তমানে ৪৮ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অথচ একটা সময় এই হার ছিল ৮৫ শতাংশ। কৃষির দুর্দিন বোঝার জন্য এ পরিসংখ্যানটাই যথেষ্ট। এদিকে অনেকে আবার বলছেন, বারো মাস আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ১২ মাস উৎপাদন করা যায় এমন বীজ বাজারে আসলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, কৃষকই না থাকলে চাষটা করবে কে?

কালের আলো/এনআর

Print Friendly, PDF & Email