স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখে সেই পুলিশ এই পুলিশ

প্রকাশিতঃ 7:05 pm | November 14, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

অতিকথন তাঁর ধাঁচে নেই মোটেও। মনেপ্রাণে যা বিশ্বাস করেন সোজাসাপ্টা সেই কথাই বলেন। একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেও তাঁর ব্যবহার মুগ্ধ করে সবাইকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দিন-রাত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে আমুল বদলে দিচ্ছেন পুলিশকে। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি।

আরও পড়ুন: কেন ‘চেতনায় অম্লান’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানালেন এসপি আবিদ

মন্ত্রী বেশিরভাগ সময়েই দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এক যুগ আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। সেই পার্থক্যের কথা ময়মনসিংহে এসেও উচ্চারণ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বললেন, ‘আমি প্রায়ই বলে থাকি, আপনারা ১২ বছর আগে যে পুলিশ দেখেছেন আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় যে পুলিশ তা এক নয়। এ পুলিশ যে কোন চ্যালেঞ্জ আজ মোকাবেলা করতে পারছে।’

একজন পুলিশ সুপারের (এসপি) দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশও সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সেই কথাই যেন অবলীলায় উচ্চারণ করলেন একাত্তরের রণাঙ্গণের এ লড়াকু এ মানুষটি-‘একটি বিরাট এলাকা ময়মনসিংহ। তারপরও এই এলাকাকে শান্ত, মাদকমুক্ত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। জঙ্গিমুক্ত অলরেডি করেছে। বিখ্যাত জঙ্গিদের অবস্থান কিন্তু এই ময়মনসিংহে ছিল।

আমরা একে একে চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করেছি। সন্ত্রাস আজ নেই বললেই চলে। ইভটিজিং একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছিল। সেই জায়গাটা আমাদের পুলিশ বাহিনী বটেই নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সমাজসেবকরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সেজন্যই সমাজের এই অসঙ্গতিগুলো, ব্যাধিগুলো চিহ্নিত করতে পারছি ও দূর করতে পারছি।’

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ লাইন্সে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ আয়োজিত আন্ত:জেলা মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে কমিউনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন দেশের ইতিহাসে সফল এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ময়মনসিংহ সফরকে ঘিরে সাজ সাজ রব পড়েছিল মহানগরীতে। মন্ত্রী আন্ত:জেলা মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ক্ষুদে বিতার্কিকদের যুক্তি ও তথ্যের সমন্বয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা উপভোগ করলেন।

এর আগেই মন্ত্রী জেলা পুলিশ লাইন্সে উদ্বোধন করলেন চেতনায় অম্লান স্মৃতিস্তম্ভের। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেলা পুলিশের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানা ও ভালুকা মডেল থানার অনলাইন জিডির পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি কমিউনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

কমিউনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক সবই দমন করেছে পুলিশ। এখনও কিছু মাদক ব্যবসায়ী রয়ে গেছে। আমরা দেশকে মাদককে মুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা অবশ্যই দেশকে মাদক মুক্ত করবো।’

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল অনলাইন জিডি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘থানায় এসে বিরক্ত হবার আর কোন সুযোগ নেই। ঘরে বসেই দুইটি বিষয়ে (লস্ট এন্ড ফাউন্ড) জিডি করতে পারবেন। ভবিষ্যতে সবকিছু নিয়েই জিডি আপনারা অনলাইনেই করতে পারবেন। আমরা অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ব্যবস্থা করছি। সমস্ত সেবাগুলো আপনাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ময়মনসিংহে স্বাগত জানিয়ে কমিউনিটি পুলিশের উদ্যোগে তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুন নির্মাণ করা হয় গোটা নগরীজুড়ে। এছাড়া ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু’র পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমানের উদ্যোগে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মন্ত্রীর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা ছবি সম্বলিত ‘রোড সাইন’ স্থাপন করা হয়। এটিও দৃষ্টি কাড়ে সবার।

কমিউনিটি পুলিশের মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন। মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি, সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, আনোয়ারুল আবেদিন তুহিন, কাজিম উদ্দিন ধনু, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড.এ.এইচ.এম. মোস্তাফিজুর রহমান, লেখক ও শিক্ষাবীদ ড.জাফর ইকবাল, জাদু শিল্পী জুয়েল আইচ, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মিজানুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রশংসা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়ান আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে সেই প্রান্ত ঘুরে বেড়াই। যেখানে যাই সেখানেই দেখি এইযে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকটাও মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে আগামী বছর আবহাওয়া কেমন হবে সেই খবরটাও পাচ্ছে।

চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিচ্ছে। এই যে সুফলটা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাচ্ছে এটার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর যোগ্য উপদেষ্টা আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয়। যিনি প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন এই জায়গাটিতে যাওয়ার জন্য এবং সবসময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে এই কাজটি সহজ করে দিয়েছেন। সেটারি সুফল আপনারা দেখলেন অনলাইন জিডি।

মন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জরুরি কল সেবা ৯৯৯ আমরা ওপেন করেছিলাম। তা এখন সারা বাংলাদেশে কিন্তু পরিচিত হয়ে গিয়েছে। যেখানেই মানুষ অসুবিধায় পড়ে যান তখনই ৯৯৯ চাপলেই পুলিশ সদস্য তার পাশে এসে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটিরই সুফলই অংশ বিশেষ।’

কালের আলো/এসআর/এমএ

Print Friendly, PDF & Email