ঢাবি ছাত্রলীগ নেত্রীকে নির্যাতন করে ফেসবুকে ভিডিও

প্রকাশিতঃ 9:20 pm | April 12, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

এক ছাত্রীর রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে জুতার মালা পড়িয়ে, গায়ের কাপড় টেনে হিঁচড়ে ছিড়ে ফেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যোগ দেয়া ওই হলের একাধিক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ ছিল এশার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুফিয়া কামাল হলের একাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী প্রতিবেদককে জানান, মোর্শেদাসহ হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী যেসব মেয়েরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করে মঙ্গলবার রাতে হলে ফিরেছিলেন, সেসব মেয়েদের ডেকে এশা গালিগালাজ করেন। এমন আচরণের পর মোর্শেদা তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং কক্ষ থেমে বের হয়ে যেতে চান।

কিন্তু কক্ষের দরজা বন্ধ ছিল। আর এ সময় মোর্শেদা খানম এশার কক্ষের জানলার কাঁচে লাথি দেয়ার পর তার পা কেটে যায়।

এই ঘটনাকে ব্যবহার করে এশার ওপর হামলা করা হয়। ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন।

এমনটি দেশের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাগুলোও যাচাই বাছাই ছাড়িই এই তথ্য তাদের অনলাইন সংস্করণে ছড়িয়ে দেয়। আর এতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা হলের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। আর ভেতরে এশার ওপর চড়াও হয় কিছু ছাত্রী।

রাত চারটার দিকে এশা সকল শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু কয়েকজন ছাত্রী তার কথা কর্ণপাত না করে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তার ওপর অপমানসূচক নির্যাতন চালানো হয়।

এশার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পরই ঘটনাটি যাচাই না করেই এশাকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। পরে তাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। তবে পরে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ হয়।

তবে এশার বিরুদ্ধেও ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। হলের ছাত্রীদের অভিযোগ, এশা নানা সময় ছাত্রীদের নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করতেন। তবে এতদিন ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি।

তবে এশাকে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে। তারা বলছে, এশা কারও ওপর নির্যাতন করলে সেটার বিচার হতে পারত আইনি প্রক্রিয়ায়। কিন্তু তাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিবিসি বাংলার সাংবাদিক রাকিব হাসনাত সুমন লিখেছেন, ‘ভিডিও টা দেখে প্রচণ্ড কষ্ট পেলাম … অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছে….. শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন কোথাও এ ধরণের হিংস্র, পাশবিক আচরণ মেনে নেয়া যায় না .. সে দলীয় হোক আর নির্দলীয় হোক।’

যমুনা টিভির সাংবাদিক শাকিল হাসান ফেসবুকেই প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘অকল্পনীয় বর্বরতা, অসভ্যতা এর মতো হিংস্রতা হয় না।একটা মেয়েকে কতগুলো মেয়ে মিলে জুতার মালা পরাচ্ছে আবার তার ভিডিও করছে। কতগুলো মেয়ে আবার মেয়েটার জামা টেনে খুলছে। এটা কীভাবে সম্ভব?’

‘এমন হিংস্রতাও হয়! অন্যায়ের বিচার কোনভাবেই অন্যায় দিয়ে হয় না। এমন অপমানের চেয়ে মেয়েটার মৃত্যুও অনেক মর্যাদার হতো। এখন মনে হচ্ছে নারী নির্যাতনে সুযোগ পেলে নারীরাও কম যান না।’

সাংবাদিক আবু বক্কর সিদ্দিক লিছেছেন, ‘ওই মেয়েটি যে এশাকে আক্রমণ করতে গিয়ে পা কেটেছে, তার ও তার সহযোগীদের কথায় যত অস্পষ্টতা ছিল, তা ছিল না এশা‌র ওপর চরম বর্বরতা চালানোর ভি‌ডিওতে। যে নারকীয়, বর্বরতম নির্যাতন এশার ওপর চা‌লানো হয়েছে, তা পৃ‌থিবীর সবচেয়ে পশ্চাদপদও ভূখণ্ডেও বিরল। একদল সংঘবদ্ধ দুস্কৃ‌তিকা‌রিণী তাকে শুধু শারীরিকভাবে নির্যাতন ও হেনস্থাই করে‌নি শুধু, ওই গভীর রাতে একদল উন্মত্ত, পাশব নৃশংসতার মুখে তুলে দিয়েছে। এই দৃশ্য তারা আবার নিজেরাই ধারণ করে ছ‌ড়িয়েছে, যা দেখার মতো নয়। কিন্তু যে বাংলা‌দেশে উপনীত হয়ে‌ছি, তাত‌ে এই অন্যা‌য়ের প্র‌তিবাদটুকু করার সুযোগটুকুও আর নেই।’

গাজীপুর জেলা আদালতের বিচার নিয়াজ মাখদুম শিবলী লিখেছেন, ‘যত বড় অপরাধীই হোক কাউকে জুতার মালা পরিয়ে দেয়া কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। এটা হিউম্যান ডিগনিটির প্রশ্ন।’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে এমন গ্রাম্যতা, আদিম, অসভ্য আচরণ চরম নিন্দনীয়। এবং সেটি ভিডিও করে ভাইরাল করা আরও বড় অপরাধ।’

‘একটা জিনিস মনে রাখবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুব খারাপ জায়গা কিংবা পবিত্র জায়গা, ন্যাচারাল পানিশমেন্টের তীর্থভূমি বলা যেতে পারে। কাউকে একটা টোকা মারলেও তার ফল ভোগ করে ক্যাম্পাস থেকে যেতে হয়।’

তবে এশাকে নির্যাতন করে ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পুলিশ এখন অবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি গঠন

সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চার সদস্যের একটি কমিটি ঘটনাটি তদন্ত করবে। কমিটিতে আছেন ছাত্রলীগের দুই সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান নুপুর ও নিশীতা ইকবাল নন্দী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।

 

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email