শুভ জন্মদিন, প্রিয় স্যার

প্রকাশিতঃ 7:08 pm | October 11, 2019

মেহেদী হাসান, কালের আলো:

‘আজি গাহিব কিসের গান/আজি করিব কিসের দান/ আমার যত প্রতিভা আছে/ সে তো তোমারই সম্মান’- প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে একজন কবি এভাবেই ‘গুরুবন্দনা’ জানিয়েছেন।

কোনো কোনো মানুষ শুধু মনের বন্ধ জানালা খুলে আলোর পথ-ই দেখান না, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই আলোতেই দাগ ফেলে চলতে শেখান। তাকে ভালোবেসেছিলাম সেদিন, যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল। তিনি-ই নতুন করে আমার ব্যক্তিসত্ত্বা ও বোধগুলো জাগতে শুরু করে দিয়েছিলেন।

জীবন নিয়ে আমি প্রায় হতাশ-ঠিক এই সময়েই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তার দর্শন ও জীবনাদর্শ দেখে আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম সেদিন।

কথা প্রসঙ্গে তিনি উপদেশ দিলেন- জীবনে কী পেলাম-এটা নিয়ে না ভেবে, ভাবতে শিখিয়েছিলেন এই ছোট জীবনে মানুষের জন্য কী করতে পারলাম, তা।

সদা প্রগতির দিকে যার দৃষ্টি তিনি আর কেউ নন, তিনি আমার প্রিয় মানুষ প্রফেসর ড. সামসুদ্দিন আহমেদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। সবার কাছে ‘খোকন স্যার’ বলেই পরিচিত তিনি।

বর্তমানে দায়িত্ব পালন করেছেন জামালপুরে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) উপাচার্য হিসেবে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রথম প্রধান নির্বাহী হিসেবে বিশ্বমানের একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের প্রখ্যাত এ শিক্ষাবিদ।

স্যারের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, শিলা, কঠিন শিলা কিংবা খনিজ সম্পদের বিভিন্ন বিষয় অর্থাৎ ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যার বিভিন্ন বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে সহজভাবে উপস্থাপন করেন তিনি। তা দেখে প্রথম ক্লাসেই মুগ্ধ হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সায়েন্সের কাঠ-খোট্টা বিষয়গুলোও যে আনন্দ নিয়ে পড়া যায় তা খোকন স্যারের ক্লাস না করলে বোঝা যাবে না।

১১ অক্টোবর প্রফেসর ড. সামসুদ্দিন আহমেদের ৬১তম জন্মদিন। ১৯৫৮ সালের এই দিনে পদ্মা বিদৌত রাজশাহীতে তার জন্ম। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা, সবেই পদ্মাপাড়ের নান্দনিক এই শহরেই। দেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ মতিহারের সবুজ ক্যাম্পাস রাবির ভূ-ত্তত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ থেকে ১৯৭৯ সালে স্নাতক ও ১৯৮২-তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই নিজের মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ। পড়াশোনা ও নিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার মাধ্যমে সহপাঠী ও শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

শুরু হয় ঈর্ষণীয় ভবিষ্যত নির্মাণের পথে তার বিস্ময়কর যাত্রা। তীব্র প্রতিযোগিতায় রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তরে প্রথম বিভাগে প্রথম হন তিনি।

এরপর ১৯৮৩ সালে নিজ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। শুরু হয় তার কর্মজীবনের নতুন পথচলা। ১৯৯৩ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

এরপর ড. সামসুদ্দিন আহমদ প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত নিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত রাবির মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি লিমিটেডের বোর্ড পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৭ বছর। রাবি প্রেসের প্রশাসক ছাড়াও দায়িত্ব পালন করেছেন রাবি সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে।

রাবির বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অফিসার কল্যাণ পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এই দক্ষ শিক্ষাপ্রশাসক।

এখনও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ড. সামসুদ্দিন। তিনি ভারতের নয়াদিল্লির জাতীয় পরিবেশবিদ্যা একাডেমির আজীবন সদস্য।

দীর্ঘ কর্মময় জীবনের অভিজ্ঞতা ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সংস্পর্শে প্রফেসর সামসুদ্দিন আহমেদ ধীরে ধীরে নিজেকে পরিণত করেছেন একজন অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ হিসেবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার শুদ্ধ এই মানুষটির দীর্ঘ জীবন এবং সুস্থতায় ভরা আগামীর প্রত্যাশায় তাকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আমাদের ছায়া দিয়ে যান, শুভ জন্মদিন; প্রিয় স্যার।

কালের আলো/এমএইচ/এমএ

Print Friendly, PDF & Email