বিপদসীমার ওপরে পদ্মার পানি

প্রকাশিতঃ 3:03 pm | October 01, 2019

কালের আলো প্রতিবেদক:

পাবনায় পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার(১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীর হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পাবনার জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টরা সবাই সচেষ্ট রয়েছেন। প্রশাসন পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজর রাখছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, উজান থেকে প্রবল বেগে পানি ধেয়ে আসায় পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

পাউবো, পাবনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সানজানা নাজ জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার।

তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরেই পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ৫/৬ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। প্রতি ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

এদিকে পদ্মায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫শ হেক্টর ফসলি ও নিচু জমি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির নানা জাতের ফসল।

ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউপি চেয়ারম্যান রানা সরদার বলেন, গেল কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এবার উজানে প্রবল বর্ষণ ও ধেয়ে আসা পানির ফলে পদ্মা নদীর কোমরপুর থেকে সাঁড়াঘাট পর্যন্ত রক্ষা বাঁধের দুই থেকে তিন ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের রূপপুর সড়কের নিচু অংশের ফসলসহ জমি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফসলসহ জমি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বসতভিটা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ঈশ্বরদীর সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মুলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধানসহ ৪০০ হেক্টর জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীকুন্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া, কামালপুর ও বিলকেদায়। মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। তবে পানি না কমা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক পাওয়া কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ ওরফে কুল ময়েজ জানান, কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টিতে এমনিতেই কৃষকদের মাঠের শাক সবজিসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শত শত কৃষক এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পাবনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, যে গতিতে পদ্মায় পানি বাড়ছে তাতে ধারণা ছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মায় যে হারে পানি বাড়ছে, তা নদী তীরবর্তী এলাকাসহ আশপাশের জনমানুষের জন্য অশনি সংকেত। বৃহৎ ক্ষতির আগেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। উজানের পানির বেগ জানান দিচ্ছে, বিপদ আসন্ন।

এদিকে পাবনার বাংলা বাজার লঞ্চঘাট, সুজানগর, নাজিরগঞ্জ, চলনবিল, বড়াল, গোমতি, চিকনাইসহ ছোট খাটো বিলে পানি বেড়েছে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণের সঙ্গে পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে পরিমাণটা বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

কালের আলো/বিআর/এমএম

Print Friendly, PDF & Email