যেভাবে বদলে গেছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

প্রকাশিতঃ 8:49 pm | March 30, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর চিকিৎসা সেবার প্রশ্নবোধক মান। সরকারি হাসপাতালের কথা উঠলেই পাশাপাশি চলে আসে এসব শব্দমালা। চোখের সামনে ভেসে উঠে দুর্ভোগের সারি সারি চিত্রপট। রোগীদের কাছে সরকারি ওষুধ মানেই ‘সোনার হরিণ’। স্যালাইন, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী সব ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী মিলবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য সেবা মানেই বিপন্ন এক গল্প দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে।

কিন্তু ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ক্ষেত্রে এসব যেন পুরনো ধারাপাত। নতুন কথা হচ্ছে, সরকারি এ হাসপাতালটি দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা আর অনিয়মকে হিমাগারে পাঠিয়েছে। খোলনলচে বদলে নতুন রূপে আত্নপ্রকাশ করেছে এ হাসপাতাল।

আর এসব অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ‘রোগী বান্ধব’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া হাসপাতালটির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ। তাঁর প্রচেষ্টাতেই এ হাসপাতালে আধুনিক, সুচিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত হয়েছে। সূচিত হয়েছে ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি ভবনের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো নোটিশে বলা হয়েছে ‘হাসপাতালে সরবরাহকৃত সরকারী ঔষধ শতভাগ প্রদান করা হয়।’ এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে জানাতে বলা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপকে।

থানার মতো সিটিজেন চার্টারের বেশিরভাগজুড়েই সেই ওষুধ সরবাহের কথাই। অর্থাৎ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়েই জানান দিচ্ছে এ হাসপাতালে ওষুধের কোন সমস্যা নেই।

অধুনালুপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রধান আশ্রয়স্থল এ হাসপাতাল। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুরের মানুষজনও প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালের এক হাজার শয্যার বিপরীতে এখানে রোগী ভর্তি থাকেন আড়াই হাজার থেকে পৌনে ৩ হাজার। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক এবং হাসপাতালের বহির্বিভাগে পাঁচ সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

 

দেখা গেছে, এ হাসপাতালে অতীতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের অবাধ বিচরণ ছিল। এক্ষেত্রেও বর্তমান পরিচালক এনেছেন কঠোর নিয়ন্ত্রণ। এ হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভয়বাণী রোগী ও তাদের স্বজনদের মনে সৃষ্টি করেছে শক্তি ও সাহস।

আলাপ হলো হাসপাতালটির হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, হার্টের রক্তনালীর ব্লক ছাড়ানোর সাড়ে ৩ হাজার টাকা দামের স্ট্রেটোকাইলেজ নামের ইনজেকশন এখন আর বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে না। হার্টের রক্তনালী বন্ধ প্রতিরোধক ৮’শ টাকা মূল্যের এনোক্সিপেরিন ইনজেকশনও মিলছে। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ডায়ালইস্লো মেশিনও।

সরকারি ওষুধ সরবাহের এ অবস্থা হাসপাতালের নিউরোসার্জারীসহ বিভিন্ন বিভাগেও। হাসপাতালের ওষুধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার পর থেকেই বিনামূল্যেই ওষুধ মিলছে এ হাসপাতালে। আর এতে করে মাথায় হাত পড়েছে হাসপাতালের সামনে দিনের পর দিন চুটিয়ে ব্যবসা করা ফার্মেসীওয়ালাদের।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনেরা জানান, হাসপাতাল পরিচালকের একটি বড় সাফল্য কালোবাজারে হাসপাতালের ওষুধ বিক্রি ঠেকানো। রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এখন আর বাইরে যেতে হয় না। হাসপাতালেই মিলছে সব। দালালেরও কোন উৎপাত নেই।

স্বাস্থ্যসেবা স্বস্তি ও সেবাদায়ক করতে সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার মধ্যে দিয়ে সব ধরণের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে হাসপাতাল পরিচালক চিকিৎসা সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি গোটা হাসপাতালটিকেই আমুল বদলে দিয়েছেন, বলছিলেন জেলা নাগরিক আন্দোলনের এক নেতা।

দেশের সব সরকারি হাসপাতালের মধ্যে সর্ব প্রথম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়েছেন ওয়ান স্টপ সার্ভিস। এ সার্ভিস চালুর সুফল পাচ্ছেন রোগীরা। ২৪ ঘন্টাই হাসপাতালে মিলছে সেবা। আর এ সার্ভিস চালু করে সোব নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিচালক ইমারজেন্সি ওয়ান স্টপ সার্ভিসে যুক্ত করেছেন এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ইসিজি, প্যাথলজি ল্যাব ও অপারেশন থিয়েটার স্থাপনসহ পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সুবিধা।

শুধু কী তাই মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, অর্থোসার্জারি, শিশু, পেডি-সার্জারি ও এনেসথেসিওলজি অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ নার্স, প্যারামেডিক ও সাপোর্ট স্টাফ রয়েছেন ওয়ান স্টপ সার্ভিসে। এ সার্ভিস চালুর ফলে হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ কমার পাশাপাশি ভোগান্তিও হ্রাস পেয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে উন্নত সেবা পেয়ে রোগীরা সন্তুষ্ট হলেও পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আবারো ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগও উচ্চারিত হচ্ছে হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে।

তারা বলছেন, হাসপাতাল থেকে যারা এখন আর অনৈতিক বা আর্থিক সুবিধা নিতে পারছেন না তাঁরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন পরিচালকের বিরুদ্ধে। বিশেষ ওই মহলটি প্রভাবশালী। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবেই তাঁরা পরিচালকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। কিন্তু ‘রোগী বান্ধব’ পরিচালকের সঙ্গে রয়েছেন পুরো ময়মনসিংহবাসী। সেবার মানের এ গতিশীলতা তিনি ধরে রেখে নির্ভয়ে পথ চলবেন, এমন আশাবাদ নগরীর সচেতন নাগরিকদের।

কালের আলো/এএস/এএ

Print Friendly, PDF & Email