যেভাবে বিশ্বমানের আধুনিকায়নের পথে ফায়ার সার্ভিস

প্রকাশিতঃ 10:01 am | September 24, 2019

যখন পুড়ন্ত বা ডুবন্ত এবং ধ্বংসস্তুপ-মানুষকে বাঁচানোই যখন মূল লক্ষ্য ও কাজ তখন সংকটকাল। আর দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় সংকট মোচনের গুরুদায়িত্ব মানে অগ্নিপরীক্ষা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর বারবার সেই অগ্নিপরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। এ নিয়ে দেশের জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম কালের আলোর’ ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ প্রকাশিত হচ্ছে দ্বিতীয় কিস্তি।

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

দেশে নগরায়ন ও শিল্পায়ন বাড়ছে। সেই সাথে হচ্ছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট। একই সাথে রয়েছে ২১ টি নদ-নদী কেন্দ্রীক বন্দর এবং ভূমিকম্পসহ নানা দুর্যোগ-দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়েই সরকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে বিশ্বমানের আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: উন্নত বিশ্বের আদলে সাজবে ফায়ার সার্ভিস

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন কালের আলোকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলাকে ফায়ার সার্ভিসের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ফায়ার সার্ভিসকে ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আলাদা প্রকল্পে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিসকে সক্ষমতা দিতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিসে উদ্ধার অভিযান ও অগ্নিনির্বাপণে বিশেষ হেলিকপ্টার, ২০ তলা উচ্চতা কভার করার জন্য ৫ টি উঁচু মই বা লেডার, ভূমিকম্পের মাত্রাও উৎস জানার জন্য কমান্ড সেন্টার স্থাপন, ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে বেজ আইসোলেশন টেকনোলজিতে নির্মিত ভবনসহ রাজধানীতে ১০ টি অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন এবং সব উপজেলায় ফায়ার স্টেশন সেবা চালুর জন্য ৩৩০ কোটি টাকার অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সংযোজন করার কার্যক্রম চলছে।

আরও পড়ুন: কালের আলোতে ‘অগ্নিপরীক্ষার অগ্নিপথে ফায়ার সার্ভিস’

একই সূত্র জানায়, ১১ টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্থাপন প্রকল্পে ৬২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এসব ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষে ৫৬৭ টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪০৬ টি উপজেলায় ইতোমধ্যেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাদ বাকী ১৫৯ টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।

আরও পড়ুন: চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত ফায়ার সার্ভিস, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা

ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সারা দেশে ফায়ার স্টেশনগুলোর জন্য ২৫০ টি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনের জন্য অন্তত একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ইশতেহারে এ ব্যাপারে অঙ্গীকার রয়েছে।

সূত্র মতে, ২৫০ টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ২০ টি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স, হাইস্পিড ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সগুলো বেশ আধুনিক। এগুলো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানেও সক্ষম। সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে ৫ গুণ বেশি দাম এসব ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সের। এগুলোর মিনিমাম স্পিড ২০ টি নটিক্যাল মাইল অর্থাৎ, ৪০ কিলোমিটার। নদীমাতৃক জেলা ও সিলেটের হাওড়, সুনামগঞ্জের হাওড়’র জন্য ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স’র ব্যবস্থা থাকছে।

আরও পড়ুন: ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে ভূমিকম্প সহিষ্ণু আধুনিক ভবন

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ফায়ার সার্ভিসের ওয়াটার বেসেল সংগ্রহ ও ভূমিকম্প সম্পৃক্ত উপকরণ ও তথ্য দ্রুত পাওয়া যাবে। সেই সাথে কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে কমান্ড সেন্টার হচ্ছে। যা শিল্পায়ন বেল্টগুলোকে বিশেষ নজরদারিতে রাখবে।

এ কমান্ড সেন্টারে ভূমিকম্প বা অগ্নিকান্ডের তথ্য অটোমেটিক্যালি চলে আসবে। আগুন বা দাহ্য পদার্থ জাতীয় কোন পদার্থের উপস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল আসবে। সূত্র জানায়, দেশের শিল্পায়ন ও নগরায়নের অগ্রগতির পাশে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।

কালের আলো/এএ/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email