সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা জানালেন সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 1:06 pm | September 12, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শূন্য সহনশীলতার নীতির কথা বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে জাতীয় ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের চরম হুমকি মোকাবিলা করছে। বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় নেতৃত্বে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি মেনে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নানাভাবে যুদ্ধ করে চলেছে।

আরও পড়ুন: ইন্দো-প্রশান্ত সেনাপ্রধানদের রোহিঙ্গা সমস্যা ও ভবিষ্যত পরিণতি সম্পর্কে বললেন জেনারেল আজিজ

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে গত সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) রয়েল থাই আর্মির কমান্ডার ইন চিফের আমন্ত্রণে ১৯ টি দেশের সেনাপ্রধানের অংশগ্রহণে ইন্দো-প্রশান্ত সেনাপ্রধান সম্মেলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এ কথা বলেন।

ভারতের শীর্ষ বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশে হস্তান্তরের উদাহরণ তুলে ধরেন সেনাপ্রধান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার আন্তযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে ভারতের শীর্ষ বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। অনুপ্রবেশের দায়ে ঢাকায় তিনি ১৮ বছর বন্দী ছিলেন।’

সীমান্তবর্তী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা আস্থা তৈরি ও সংঘাত এড়ানোর পূর্বশর্ত বলেও মনে করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা ও কাজে তা প্রতিফলিত। বাংলাদেশ এমন কিছু করে না, যা অন্য দেশের জন্য উসকানিমূলক বলে মনে হতে পারে। ভারত, মিয়ানমারসহ কোনো দেশের জঙ্গি, চরমপন্থী, সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের এ ভূখণ্ড ব্যবহার করে তাদের দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির সুযোগ বাংলাদেশ দেয় না।’

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’

‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের (বিএসএফ) অনুরোধে আমরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসী নির্মূলে কাজ করি। মিয়ানমারে আছে আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠী। মিয়ানমারের বিজিপির অনুরোধ পেলে আমাদের বাহিনী বিশেষ যৌথ অপারেশন পরিচালনা করে থাকে এবং এর ফলাফল ও অগ্রগতি আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধানকে জানিয়ে দিই। এতে আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় টেকসই নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে’ বলছিলেন সেনাপ্রধান।

সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কথায় ও কর্মেই প্রতিফলিত যে বাংলাদেশ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নও সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমাদের অবস্থানকে তুলে ধরে।

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি কীভাবে উন্নতি করেছেন, জানালেন জেনারেল আজিজ

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসের আরেক দৃষ্টান্ত। সমুদ্র আইনের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সমুদ্রসীমা সমস্যার রায় দিয়েছেন এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই স্থায়ী সালিসি আদালত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা সমস্যার রায় দিয়েছেন। বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও আমাদের অবস্থান শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের বহি:প্রকাশ, দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন সেনাবাহিনী প্রধান।

২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা স্বাক্ষরিত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সীমান্তের অবৈধ কার্যকলাপ ও অপরাধ দমন এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এর লক্ষ্য। এই পরিকল্পনার নির্দেশিকা অনুযায়ী বিশেষ নজরদারির জন্য একটি যৌথ টিম সীমান্তজুড়ে ৩৬৬টি ঝুঁকিবহুল জায়গার তালিকা চূড়ান্ত করেছে।

উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সমন্বিত প্রহরার কাজ করছে এবং চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজরদারির দিকে মনোযোগ দিয়েছে। মিয়ানমারে সীমান্তরক্ষী পুলিশের সঙ্গেও সম্প্রতি এ ধরনের নজরদারি শুরু হয়েছে। এই পদক্ষেপে আন্তদেশীয় অপরাধ দমন এবং ভুল-বোঝাবুঝির অবসানের মতো ফল পাওয়া যাচ্ছে।’

কালের আলো/এএ/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email