মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের অদ্ভুত দাবি ও ইশতিয়াক রেজার জবাব

প্রকাশিতঃ 9:44 am | August 17, 2019

কালের আলো ডেস্ক:

১৯৭৫ সালে সিপিবি একদলীয় ব্যবস্থা তথা বাকশাল গঠন না করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিয়েছিল বলে দাবি করেছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তার এমন দাবির প্রেক্ষিতে সিনিয়ার সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা বলেছেন, সমাজতন্ত্র নিজেই একদলীয় ব্যবস্থা, তাই বাকশালকে এক দলীয় বলা তার জন্য মানায় না।

এর আগে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম লিখেছেন, ১৯৭৫ সালে সিপিবি একদলীয় ব্যাবস্থা তথা বাকশাল গঠন না করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরামর্শ দিয়েছিল। তিনি পার্টির পরামর্শ গ্রহণ করেন নি।

এমতাবস্থায়, ‘বাকশাল’ গঠিত হয়ে যাওয়ার পরে পার্টিকে প্রকাশ্যে ‘বিলুপ্তির’ ঘোষণা দিতে হলেও আসলে পার্টি বিলুপ্ত করা হয়নি। খুবই গোপনে, অনেকটা সংকুচিত আকারে, পার্টির অস্তিত্ব ও তার কাঠামো বহাল এবং সক্রিয় রাখা হয়েছিল। কিন্তু স্বাভাবিক কারনেই সেকথা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি অনেক পার্টি সদস্যকেও সে বিষয়টি অবগত করে ওঠা সম্ভব হয়নি। গোপনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধীরে-ধীরে পার্টি কাঠামো সম্প্রসারিত করা হচ্ছিল।

আমি কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলাম না। ঢাকা জেলা কমিটির ১৯/২০ জনের মধ্যে আমি সহ ১০/১২ জন এবং কমিটির বাইরে আরো সম্ভবতঃ ২০/২৫ জনকে নিয়ে গোপনে ‘হার্ড কোর’ কাঠামো বজায় রাখা হয়েছিল। বাকশাল গঠনের পর এগুলো কার্যকর হয়। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৩/৪ মাস এই অবস্থা বজায় ছিল। আমরা ৩/৪ জনের গ্রুপ করে ভাগহয়ে ১/২ বার বৈঠক করেছি। কেন্দীয় কমিটি ও অন্যান্য জেলা কাদেরকে নিয়ে ও কিভাবে সংগঠিত রাখা হয়েছিল তা আমার জানার কথা ছিল না।

এরকম একটা ‘হার্ড কোর’ আগাগোড়া গোপনে সংগঠিত ছিল বলেই ১৫ আগস্টের পর সব পার্টি সদস্যদেরকে তাই দ্রুত পার্টি কাঠামোতে সংগঠিত করা সম্ভব হয়েছিল।

তার এই স্ট্যাটাসের জবাবে ইশতিয়াক রেজা নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু বাকশাল কায়েম করেছিলেন একটা বৃহত্তর অর্থনৈতিক ভাবনা মাথায় রেখে। আওয়ামী লীগের সাথে এই বাকশালে নিজেদের বিলুপ্ত করেছিল সিপিবি ও ন্যাপ। সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নে বাকশাল ঠিক ছিল কিনা সেটা অন্য তর্ক। কিন্তু আজ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বললেন, তারা নাকি একদলীয় ব্যবস্থা না করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাই প্রকাশ্যে সিপিবি’র ‘বিলুপ্তির’ ঘোষনা দিয়েও গোপনে পার্টির কাঠামো রেখে দেয়া হয়েছিল।

এতদিন পর এই কথায় অন্য কোন গন্ধ পাওয়া যায়। প্রথম কথা হলো সমাজতন্ত্র নিজেই একদলীয় ব্যবস্থা, তাই বাকশালকে এক দলীয় বলা তার জন্য মানায় না। একথা তিনি বলেননি যে বঙ্গবন্ধু তাদের বাধ্য করেছিলেন, বলেছেন পরামর্শ শুনেননি। তারা পার্টি বিলুপ্ত করেই গিয়েছিলেন। তাহলে গোপনে দল টিকিয়ে রাখাকে কি বলা যায়?

কমরেড ফরহাদ নেই, মনি সিংহ নেই.. সেলিম সাহেব এসব কথা তারা জীবিত থাকতে বলেননি, তারাও কখনও বলেননি। বিষয়টা অদ্ভূত। সেই সময়ের সরকারের প্রতিটি কাজের সাথে ছিল সিপিবি আর ন্যাপ। তখন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সিপিবির মূল নীতি নির্ধারকও সেভাবে ছিলেন না। এখন তার কাছ থেকেই নতুন তথ্য দলের নতুন চেহারা বৈ কি!

কালের আলো/পিআর/এমএম

Print Friendly, PDF & Email