জোড়া মাথার অপারেশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 9:27 am | August 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জোড়া মাথার যমজ বোন শিশু রাবেয়া ও রোকেয়াকে অস্ত্রোপচারে আলাদা করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, এই ধরনের ‘জটিল’ অপারেশন বাংলাদেশেই যেন হতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

শুক্রবার(১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় গণভবনে রাবেয়া-রোকেয়ার অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাঙ্গেরির মেডিকেল টিম এবং বাংলাদেশের আটটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা বলেন।

জটিল এই অস্ত্রোপচারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই অভিজ্ঞতাটা যে আমরা অর্জন করতে পারলাম, সেটা দিয়ে এখন আমরা আমাদের নিজেদের মেডিকেল দিকটাকে আরও কীভাবে উন্নত করতে পারি সেদিকটায় আমাদের নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা বা বিদেশে প্রশিক্ষণ করিয়ে নিয়ে আসার জন্য যা যা করার তা সরকার করছে।

‘সব ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আমাদের দেশেই যেন এ ধরনের ক্রিটিক্যাল কাজগুলো যেন আমরা করতে পারি সেটা করব।’

সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রাবেয়া-রোকেয়াকে রোববার দেখতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দুই দফা অস্ত্রোপচারের পর গত জানুয়ারিতে তিন বছরের রাবেয়া-রোকেয়াকে চিকিৎসার জন্য হাঙ্গেরি নেওয়া হয়। সেখানে কয়েক মাসের চিকিৎসা শেষে তাদের সিএমএইচে আনা হয়।

জোড়া মাথা আলাদা করতে ৪৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া রাবেয়া-রোকেয়ার দেহে।

অন্যান্য হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ঘুরে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাদের।

হাঙ্গেরি ও বাংলাদেশের চিকিৎসক দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসা শুরুর বর্ণনাও দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, কোনো একটা পত্রিকায় নিউজটা দেখে রেহানা আমাকে জানাল। আমি সামন্তলালকে বললাম। সামন্ত ছুটে আসল। আমিতো একবার গেলাম ইনস্টিটিউটে দেখতে। একসঙ্গে মাথা লাগানো। তারপরও বাচ্চা দুটো এত হাসিখুশি!

‘আমি ওকে (সামন্তকে) বললাম, যা যা করণীয় তুমি কর। আমি তোমার পাশে আছি। এক পর্যায়ে ও মাঝে মাঝে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যেত। বিশেষ করে টাকা-পয়সার ব্যাপার হলেই আমাকে মেসেজ পাঠাত। আপা কী করব? এত টাকা লাগবে। আমি বলতাম, ওই চিন্তাটা তোমার না। ওই চিন্তাটা আমার। এমনকি এই অপারেশন যখন হবে তখনও সে আমার অফিসে চলে আসছে ছুটে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাবেয়া-রোকেয়ার জোড়া মাথা আপনারা উন্মুক্ত করে দিলেন। কিন্তু আপনাদের সবাইকে ওরাই একসঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিয়ে গেল। এই এতগুলি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এখানে।

দেশের নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের আরও উন্নয়ন করারও ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, নিউরো ইনস্টিটিউট আমরা করেছি। এই নিউরো ইনস্টিটিউটে কিন্তু আমাদের আরও অনেকগুলো কাজ করা দরকার। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এখানে প্রয়োজন আছে।”
শেখ হাসিনা এ সময় তার সরকারের আমলে দেশে বিশেষ করে রাজধানীতে শিশুদের জন্য হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা চিন্তা-ই মাথায় থাকে এই দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি, এখন কীভাবে এই দেশকে আমরা মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ব। কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াব।

‘অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণ। সেটা আধুনিক হবে, প্রযুক্তিসম্পন্ন হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এবং সেটা সর্বক্ষেত্রে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এই মেডিকেল সায়েন্সেও আমাদের দেশ অনেক অগ্রগতি করতে পারবে।

বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল সার্ভিসেসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফশিউর রহমান এবং হাঙ্গেরীয় মেডিকেল টিমের সার্জন ডা. সাপোডির নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে ১৩৩ জন ছিলেন।

হাঙ্গেরীয় মেডিকেল টিমের সদস্যরা রাবেয়া-রোকেয়ার সফল অস্ত্রোপচারকে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে চমৎকার সমন্বয় হিসেবে বর্ণনা করেন।

এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে এই প্রথম এবং বিশ্বে ১৭তম বলে জানান তারা।

কালের আলো/ডিএআর/এমএ

Print Friendly, PDF & Email