নওগাঁয় ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের প্রতিবাদ করায় সংঘর্ষ: আহত ১০

প্রকাশিতঃ 9:39 pm | March 18, 2018

নওগাঁ প্রতিনিধি, কালের আলো:

নওগাঁর বদলগাছীতে ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ কাজে বাধা দেয়ায় এলাকাবাসীর উপর হামলা চালিয়েছে ইটভাটার লোকজন। এতে উভয় পক্ষের ১০জন আহত হয়েছে।

রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের শুরকালী নামক স্থানে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- ওই গ্রামের মৃত সন্তা সরদারের ছেলে বক্কর হোসেন (৪৫), আব্দুল জব্বার (৬০), বাবুল হোসেন (৪৭), কিনা সরদারের ছেলে ফজেল হোসেন (৪০), মৃত ইমার উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৫৮), মৃত হযরত আলীর ছেলে আব্দুল মান্নান (৫২), মৃত ঠুনা সরদারের ছেলে আকিমুদ্দিন (৫৭), আলতাফ হোসেনের ছেলে বকুল হোসেন (৩৭), মতিউর রহমানের স্ত্রী চায়না বেগম (৪০), বাবুল হোসেন (৪৭)।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন আধাইপুর গ্রামের শুরকালী নামক বাজারের পার্শ্বে কোল্ডস্টোরেজ নির্মানের কথা বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে কিছু পরিমাণ জমি কিনে নেন। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের দিকে হঠাৎ করে উক্ত জমিতে ইটভাটা নির্মানের কাজ শুরু করলে গ্রামবাসী তাতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে কাজ চলমান থাকলে গ্রামের নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসক এবং পরিবশে অধিদপ্তর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক একেএম মাসুদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে পত্রের মাধ্যমে ইটভাটার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। তারপর থেকে ইটভাটার কাজ বন্ধ ছিল।

হঠাৎ করে শনিবার (১৭ মার্চ) থেকে পুনরায় ইটভাটা নির্মান কাজ শুরু হয়। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বাধা দিতে গেলে ইটভাটা মালিক পক্ষের ভাড়াটিয়া লোকজন লাঠি, রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের ১০জন আহত হয়েছে।

আহতদের বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের নওগাঁ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অত্র উপজেলায় এরুপ অবৈধভাবে আরো ৬টি ভাটা নির্মান কাজ চললেও অদৃশ্য কারনে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করায় জনমনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে।

শুরকালী গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, কোল্ডস্টোরেজ করার নাম করে আমাদের কাছ থেকে জমি নেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের ছেলেদের চাকুরিও দেয়া হবে। কিন্তু কোল্ডস্টোরেজ না করে ইটভাটা করা হচ্ছে। আমাদেরকে ভূল বুঝিয়ে প্রলোভন দিয়ে জমি নেয়া হয়েছে। কয়েকবার এলাকাবাসী মিলে বাধা দেয়ায় ইটভাটা তৈরীর কাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শনিবার থেকে আবারো কাজ শুরু করে। ইটভাটা থেকে ১০০ গজ দুরেই আমাদের বাড়ী। ইটভাটা তৈরী হলে আমাদের ঘরবাড়ী সহ ফসলি জমির ক্ষতি হবে। আমরা হুমকির মুখে পড়বো। বাধা দেয়ায় আমাদের উপর ইটভাটার লোকজন হামলা চালিয়েছে।

মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, এলাকাবাসীরা আমার লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তদন্তের রির্পোট পাওয়ার পর আমাকে নির্মাণ কাজের অনুমোতি দিয়েছে। তবে ভাটাতে আগুন দিতে পারবো না বলে বলা হয়েছে। তবে আমার লোকজন এলাকাবাসীর উপর হামলা করেনি।

বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দীন বলেন, ইটভাটার মালিক ভাটাটি তৈরী করবে। কিন্তু এলাকাবাসী তৈরী করতে দিবে না। এনিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন নিয়ে আসে। দু’পক্ষের লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে এবং পুলিশ মোতায়েন করা আছে।

Print Friendly, PDF & Email