শ্রীলঙ্কার কাছে টানা হার বাংলাদেশের

প্রকাশিতঃ 10:53 pm | July 28, 2019

স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলো:

শ্রীলংকার বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে হেরে ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া করল টাইগাররা। তিন ম্যাচের সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০তে ট্রফি নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিক লংকানরা।

রোববার টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ, মুশফিকুর রহিমের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ২৩৮ রান সংগ্রহ করে। টার্গেট তাড়া করতে নেমে অভিস্কা ফার্নান্দোর ঝড়ো ফিফটিতে ৩২ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় পায় শ্রীলংকা।

রোববার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দলীয় ২৬ রানে বিপদে পড়ে যান সৌম্য সরকার। নুয়ান প্রদীপের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন জাতীয় দলের এ ওপেনার। প্রথম ওয়ানডেতে ১৫ রান করা এ ওপেনার দ্বিতীয় খেলায় ফেরেন মাত্র ১১ রানে।

এরপর মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে আউট হন তামিম ইকবাল। বিশ্বকাপ থেকেই অফ ফর্মে রয়েছেন বাংলাদেশ সেরা ওপেনার।আগের ম্যাচে শূন্য রানে বোল্ড হওয়া তামিম এদিন ফেরেন ৩১ বলে ১৯ রান করে। আর এই বোল্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে বাজে রেকর্ডের অংশ হলেন তিনি। সাকিব-মাশরাফিকে ছাড়িয়ে ৩১বার ওয়ানডেতে বোল্ড হয়েছেন তিনি। তার আগে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সাকিব ও মাশরাফি ৩০ রাব বোল্ড হয়েছিলেন।

৩১ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিক। প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে দলের হাল ধরেন তিনি। উইকেটের এক পাশ আগলে রেখে একাই লড়াই করে যান জাতীয় দলের এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।
লংকান বোলারদের তোপের মুখে পড়ে সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান রুম্মন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অসহায় আত্মসমর্পণের কারণে দলীয় ১১৭ রানে ছয় ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

সেই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলতে বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন মুশফিক। সপ্তম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েন ৮৪ রানের জুটি। ৪৯ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৪৩ রান করে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন মিরাজ।

মিরাজের বিদায়ের পরও উইকেটে অবিচল ছিলেন মুশফিক। শেষ দিকে লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। ১০৩ বলে ৮০ রান করা মুশফিক, শেষ দুই ওভারে সেঞ্চুরির জন্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। ৪৯তম ওভারে লংকান পেসার ইসুর উদানাকে দুই চার ও এক ছক্কা হাঁকিয়ে ১৫ রান আদায় করে নেন মুশফিক।

সেঞ্চুরির জন্য শেষ ওভারে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫ রান। শেষ ওভারে অসাধারণ বোলিং করেন নুয়ান প্রদীপ। লংকান এ পেসারের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে ব্যর্থ হন তিনি। শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করতে শেষ দুই বলে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩ রান। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি।

ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা ফিল্ডার যখন বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠান তার আগে সিঙ্গেল রান নেয়ার সুযোগ পান মুশফিক-মোস্তাফিজ। অবশ্য সেই সিঙ্গেল না নিয়ে মুশফিক যদি শেষ বলে স্টাইকে থাকতেন তাহলে বাউন্ডারি হলেও হতে পারত!

কিন্তু দলের স্বার্থে সেঞ্চুরির চিন্তা করে দাঁড়িয়ে না থেকে, সিঙ্গেল নিয়ে স্টাইক বদল করেন মুশফিক। আর তাতেই সেঞ্চুরির স্বপ্ন ভঙ্গ হয় এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের। শেষ বলে মোস্তাফিজ ডাবল রান নেয়ায় বাংলাদেশ থামে ২৩৮ রানে। ১১০ বল খেলে ৬টি চার ও এক ছক্কায় ৯৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।

২৩৯ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে শ্রীলংকা। উদ্বোধনী জুটিতে অভিস্কা ফার্নান্দোকে সঙ্গে নিয়ে ৭১ রান যোগ করেন দিমুথ করুনারত্নে। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার অফ স্পিনে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ২৯ বলে ১৫ রান করেন লংকান অধিনায়ক করুনারত্নে।

ইনিংসের শুরু থেকে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে ৪৩ বলে ফিফটি তুলে নেন ফার্নান্দো। অসাধারণ ব্যাটিং করে যাওয়া লংকান এ ওপেনারকে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ১২৯ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন ফার্নান্দো। তার আগে ৭৫ বলে নয় চার ও দুই ছক্কায় ৮২ রান করেন তিনি।

আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা কুশল পেরেরা এদিনও ব্যাটিং ঝড় তুলেছিলেন। ৩৪ বলে ৩০ রান করা পেরেরাকে দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। এরপর কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের অনবদ্য ৯৬ রানের জুটিতে ৩২ বল হাতে রেখেই ট্রফি নিশ্চিত করে শ্রীলংকা। দলের হয়ে ৫৭ বলে অপরাজিত ৫২ রান করেন লংকান সাবেক অধিনায়ক ম্যাথিউস। এছাড়া ৪১ রান করেন কুশল মেন্ডিস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৮/৮ (মুশফিক ৯৮, মিরাজ ৪৩, তামিম ১৯, মোসাদ্দেক ১৩, মিঠুন ১২, সৌম্য ১১, সাব্বির ১১, মাহমুদউল্লাহ ৬, তাইজুল ৩, মোস্তাফিজ ২)।

শ্রীলংকা: ৪৪.৪ ওভারে ২৪২/৩ (ফার্নান্দো ৮২, ম্যাথিউস ৫২, কুশল মেন্ডিস ৪২, কুশল পেরেরা ৩০;মোস্তাফিজ ২/৫০)।

ফল: শ্রীলংকা ৭ উইকেটে জয়ী।

কালের আলো/এআর/এমএম

Print Friendly, PDF & Email