‘শক্ত করে গামছা ধরলে এত চুরি হতো না’

প্রকাশিতঃ 2:13 am | March 15, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

‘যারা মুক্তি চান তারা গামছা ধরেন, না চাইলে শাড়ি চুরিতে থাকেন’ ময়মনসিংহবাসীর কাছে এমন আহবান জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।

তিনি বলেছেন, শক্ত করে গামছা ধরলে এত চুরি হতো না। পাহারা দিতে পারতাম। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। এমন ডাহা মিথ্যা কথা বলেন কীভাবে? মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যদি জিয়াউর রহমানের অপমান হয়- এটা মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়াউর রহমান ছিলেন শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা। তাই বলে বাঙালিদের ওপর গুলি চালায়নি। প্রকৃতপক্ষে গুলি চলেছিল জয়দেবপুরের টঙ্গীতে।

বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহের ফুলপুরে কাইচাপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসা মাঠে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়ন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, শেখ হাসিনা বলে খালেদা জিয়া চোর আবার খালেদা জিয়া বলে শেখ হাসিনা চোর। তিনি জনসভায় প্রশ্ন রাখেন, তাহলে আমরা কি চোরের দেশে বাস করি? তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইনুর গণবাহিনী যত মানুষ মেরেছে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরাও তত মানুষ মারে নাই।

শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, তার বাপকে যারা মেরেছে, তারাই এখন শেখ হাসিনার ঘাড়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দুই কোটি টাকা চুরি করেছেন একথা কেউ বিশ্বাস করবে না। যদি হলমার্ক ও শেয়ার বাজারের দুইশ কোটি বা চার হাজার কোটি টাকা চোরদের বিচার হতো তাহলে খালেদার বিচার মেনে নিতাম।

স্থানীয় বালিয়া ইউনিয়ন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি আজিজুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে ও ময়মনসিংহ জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেনের সঞ্চালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, ময়মনসিংহ জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এম আব্দুর রশিদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলী শেখ, যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর আলম শাহিন, কেন্দ্রীয় যুব আন্দোলন সভাপতি হাবিবুন-নবী সোহেল, নাটোর জেলা সভাপতি শহিদুল্লাহ মুন্সি, শেরপুর জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি জুবায়দুল ইসলাম বাবু, ফুলপুর উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, হালুয়াঘাট উপজেলা সভাপতি আব্দুস সালাম শেখ, যুব আন্দোলনের ইয়াসীন খান, রাজিব গোস্বামী, আবুল মনসুর উজ্জল প্রমুখ।

‘শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ব্রক্ষপুত্রে তলিয়ে যাবে’
ফুলপুরে বিশাল জনসভায় যোগ দেয়ার আগে বুধবার (১৪ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউজে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এ সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ব্রক্ষপুত্রে তলিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, এক হাজার বছর আওয়ামী লীগ করলেও নেতৃত্ব কর্তৃত্ব পাবেন না। পিয়ন হতে পারবেন। জমিদার হতে পারবেন না। বিএনপি করলেও একই বিষয়। আর জাতীয় পার্টির তো কথাও নাই। এ কারণে আমি লম্বা মানুষ বোকার মতো গামছার দল করেছি। আমি জীবিত না থাকলেও এ দল এক সময় দেশকে নেতৃত্ব দেবে।

দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন আলামত নেই উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, শেখ হাসিনার মতো ক্ষমতাধর বাংলাদেশে দ্বিতীয়জন নেই। তিনি যদি মানুষের কাছে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে বেশি ক্ষতি তাঁরই হবে।
ভোট ছাড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে তাদের রাজনৈতিক বেইস ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিশ্বস্ততা নষ্ট হয়ে গেছে।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কিডনি ভালো না থাকলে মানুষ বাঁচে না। তেমনি দেশে বিরোধী দল না থাকলে সরকারি দল কখনো ভালো থাকে না। বিরোধী দল হচ্ছে রাজনীতির কিডনি। এটা নেই বলে আওয়ামী লীগকে মারতে এখন আর জামায়াত বিএনপিকে লাগে না। আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগই মারে।

শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে সামলাতে সরকারের এতো বেশি পরিশ্রম করতে হতো না মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিরোধী দলের চাপেই তাদেরকে আওয়ামী লীগ সুপথে চালাতো। বিরোধী দল না থাকলে সুবিধা এটা যারা ভাবেন তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করেন।

ভারত এসে আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে দেশের মানুষের মন জয় হবে না, এমন মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, মানুষ মরণশীল। সম্মান নিয়ে মরা দরকার। মানুষ আর পশুর পার্থক্য এখানেই। বঙ্গবন্ধুর মত বড় নেতাও আমাদেরকে চাকর-বাকরের মত চালাতে পারেননি। বন্ধু সহকর্মীর মত চলেছি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, হাজার বছর আওয়ামীলীগ-বিএনপির ক্ষমতায় থাকলেও ময়মনসিংহের কেউ কতৃত্ব পাবে না। জায়নামাজের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কিন্তু কর্তৃত্ব পাবেন না। বৃহত্তর ময়মনসিংহের সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি।

উদাহারণ টেনে বঙ্গবীর বলেন, ব্রিটিশ ভারতের ৭জন মন্ত্রীর মধ্যে পাঁচ জনই ছিল ময়মনসিংহের। মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহের মানুষ ছিল দশ আনা। মুক্তিযুদ্ধে যত নিহত হয়েছে এর মধ্যে ময়মনসিংহের অর্ধেক।

 

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email