বিভ্রান্তি থাকলে খোলাখুলি আলোচনার আহবান জানালেন জাফর ইকবাল

প্রকাশিতঃ 8:24 pm | March 14, 2018

সিনিয়র প্রতিবেদক, কালের আলো:

কারো ভেতরে ভিভ্রান্তি থাকলে খোলাখুলি আলোচনার আহবান জানিয়েছেন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ও শিক্ষক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

হামলার পর চিকিৎসা শেষে নিজ ক্যাম্পাস সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে বুধবার বিকেলে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে শিক্ষার্থীদের সামনে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।

এ সময় হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে যে ছেলেটি হামলা করেছে তার প্রতি আমার বিন্দু মাত্র রাগ, ক্ষোভ নেই। তার প্রতি আমার মায়া আছে। করুণা আছে।’

তিনি বলেন, ‘কারণ সে কেন মেরেছে? সে বেহেশত পাওয়ার জন্য মেরেছে। কী ভয়ঙ্কর কথা! একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে মেরে বেহেশতে যেতে চায়!! এটা অজ্ঞতা। সে শুধু একা অজ্ঞ তা নয়, এমন আরও অনেকেই থাকতে পারে। হয়তো এখানেই কেউ আছে। কেউ হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন যদি কেউ থাকো, এমন বিভ্রান্তি যদি তোমাদের কারো ভেতর থাকে— তবে আমার অনুরোধ প্লিজ আমার কাছে আসো। আমরা খোলামেলা আলোচনা করি। তবে আসার আগে অস্ত্রটা রেখে এসো প্লিজ।’

জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার প্রতি তোমাদের কারো ভুল ধারণা থাকতে পারে। কেউ আমাকে নাস্তিক ভাবতে পারো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি পুরো পবিত্র কোরআন শরীফ খুব ভালো করে পড়েছি। আমার মতো এত ভাল করে কেউ কোরআন পড়েছে কি না আমি জানি না।’

তিনি বলেন, “আমি পড়েছি, ‘যে কোনো মানবসন্তানকে হত্যা করল সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল।’ সুতরাং যে বা যারা আমাকে মারতে চেয়েছে সে মূলত পুরো মানবজাতিকে মারতে চেয়েছে। আর তোমরা যারা আমাকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছ কিংবা বাঁচিয়েছ তারা পুরো মানবজাতিকে বাঁচিয়েছ।”

‘যারা এমন বিভ্রান্ত তারা ভুলপথে আছে’ এমন মন্তব্য করে এ সময় জাফর ইকবাল বলেন, ‘কে তোমাদের শিখিয়েছে আমি জানি না? কিন্তু বিশ্বাস করো, তারা কিন্তু আরাম আয়েশে আছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করছে। আর মাঝখান থেকে তোমাদের জীবন নষ্ট হচ্ছে। তোমরা রিমান্ডে আছ। তোমাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনরা কারাগারে থাকছে।’

গত ৩ মার্চ ক্যাম্পাসের মুক্ত মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন ড. জাফর ইকবাল। এ সময় পেছন থেকে শফিকুল নামের এক বহিরাগত তাকে ছুরিকাঘাত করে। এরপর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। এ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, ‘সেখানের চিকিৎসকরা আমাকে এত ভালবেসে সেবা দিয়েছেন যে আমি জীবনেও তা ভুলতে পারব না।’

এ সময় তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। জাফর ইকবাল বলেন, ‘ওই ঘটনার পর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পুলিশ, ডাক্তার কিংবা পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। মূলত তাদের সবার ভালবাসায় আমি বেঁচে রয়েছি। খোদাতা’য়ালা যেহেতু আমাকে মানবজাতির জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন তাই তাদের জন্য কী করব সেটি ভেবে দেখতে হবে। সারাদেশের মানুষ যে ভালবাসা দেখিয়েছে তা আমাকে নতুন করে কাজ করার জন্য চিন্তায় ফেলেছে।’

তিনি বলেছেন, ‘এখানে কেউ একজন বলেছেন, আমি সবার সঙ্গে সেলফি তুলি। হ্যাঁ আমি তুলি। আমি এখনো সবার সঙ্গে সেলফি তুলব। কারণ যারা আমার সঙ্গে সেলফি তুলে তারা আমার ফ্যান না। তারা আমাকে ভালবাসে।’

এ দেশে আর কখনো ক্যু হবে না: হামলার পর রাজধানীর সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ড. জাফর ইকবাল। এ সময় সেখানে তিনি আর্মি অফিসারদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আর্মির একজন অনেক বড় অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি বলেছি, আপনার সঙ্গে আমার কথা শেষ হয়নি। আপনাদের সঙ্গে কথা বললে অনেক কিছু জানতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এ দেশে আর কখনোই সামরিক ক্যু হবে না। কেননা এখন নতুন যে আর্মিরা রয়েছেন তাদের সবার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রয়েছে অসম্ভব রকম। তারা বুকে ৭১-এর চেতনা ধারণ করেন। সুতরাং ৭৫-এর সঙ্গে এখনকার সময়ের অনেক তফাৎ।’

 

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email