রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 2:53 pm | July 10, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের কারণে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, শিগগিরই রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যাবেন।

বুধবার (১০ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ঢাকা মিটিং অব দ্য গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। কক্সবাজারের যেসব এলাকায় রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে সেগুলি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের উপস্থিতি এসব এলাকাকে আরও অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে প্রায় এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উপরে পৌঁছেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল মানব ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরেন বলেন, আমাদের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে বিশাল উন্নতি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে এই অর্জনগুলি আজ হুমকির সম্মুখীন। সীমিত সম্পদ ও বিশ্বের সর্বনিম্ন নির্গমনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা এবং জ্বালানি সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়ে স্বল্প কার্বন উন্নয়নপথ অনুসরণ করছি। গত কয়েক বছরে আমরা গ্রিডবিহীন এলাকায় ৫০ লাখের বেশি সৌর প্যানেল স্থাপন করেছি এবং ৩৫ লাখের বেশি রান্নার উন্নত চুলা স্থাপন করেছি।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভঙ্গুর অবস্থা কাটিয়ে উঠতে ও জনগণের জন্য অভিযোজন ব্যবস্থা তৈরি করতে নিরলসভাবে কাজ করছি। গত এক দশক ধরে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অভিযোজনের মাধ্যমে নিরসনের জন্য বছরে প্রায় একশো কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছি।

‘জলবায়ু সহিষ্ণুতা অর্জনের জন্য আমরা ২০০৯ সালে একটি বিশেষায়িত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডও গঠন করেছি। এ পর্যন্ত আমরা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচির জন্য ৪২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি এই তহবিলে বরাদ্দ দিয়েছি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থপূর্ণ সহযোগিতার জন্য ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্ব সম্প্রদায় একটি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সফল হয়েছে। অনেকের মতো আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও বৈশ্বিকভাবে আমাদের এটি সমাধান করতে হবে। প্যারিস চুক্তি হচ্ছে এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর বৈশ্বিক চুক্তি।

‘বান কি মুন-এর উদ্যোগে গঠিত পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম (এইচএলপিডাব্লিউ) এর চূড়ান্ত রিপোর্টে আমরা লিখেছি ‘প্রতি ফোঁটা মূল্যবান’। বিশ্ব সম্প্রদায় এটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ ভূ-খণ্ড বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রত্যক্ষ করেছে।’

তিনি বলেন, শুধু ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে সাত লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূলীয় অঞ্চলে ১৭২টি মুজিব কেল্লা (সাইক্লোন শেল্টার) নির্মাণের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলায় পথ রচনা করেন। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) গ্রহণ করেন। সিপিপির বর্তমানে ৪৯ হাজার ৩শ ৬৫ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।

কালের আলো/এনএল/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email