ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে সীমাহীন আনন্দে ময়মনসিংহের ২৫৭ তরুণ-তরুণী

প্রকাশিতঃ 9:34 am | July 09, 2019

মেহেদী হাসান/কাজী বাপ্পী, ময়মনসিংহ :

অভাব-অনটনের সংসারে ওরা বড় হয়েছে। জীবনে চূড়ান্ত সফলতা হিসেবে পেয়েছে সরকারি চাকরি। তাও আবার ঘুষ ছাড়াই পুলিশ কনস্টেবল পদে। স্বভাবতই ওদের আনন্দ বাঁধ ভেঙেছে। সীমাহীন আনন্দে মাতোয়ারা ময়মনসিংহের ২৫৭ তরুণ-তরুণী দেশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার অঙ্গীকার করেছেন।

স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি হওয়ায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এসব মেধাবী তরুণ-তরুণীরা বলছেন, পুলিশ কনস্টেবল নিয়ে মুখরোচক কাহিনীর অন্ত নেই। সবার মাঝেই প্রশ্ন ছিল ঘুষ ছাড়া চাকরি আদৌ কী সম্ভব? প্রতিবার দালাল শ্রেণি ফায়দা লুটলেও এবার দেশের নানা প্রান্তে কঠোর অভিযানে ময়মনসিংহে তাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।

ফলে দালাল শ্রেণির সঙ্গে লেনদেনে গিয়ে কেউ সর্বশ্বান্ত হয়েছেন এমন খবর মেলেনি। স্বচ্ছতার সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পেরে তুষ্ট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন।

কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে এসপি আবিদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাননীয় আইজিপি মহোদয় আমাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার। আমরা সেই কাজটি সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।’

সোমবার (০৮ জুলাই) রাত ৮ টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন। এ ফলাফলে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় ২৫৭ জন প্রার্থী মাত্র ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে জানান, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬ হাজার ২৮০ জন পরীক্ষার্থী শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ২ হাজার ৩৬৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ৪৫২ জন। এর মধ্যে থেকে ২৫৭ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়।

রিকশা চালক ওমর ফারুকের (৪৫) মেয়ে ফারজানা আক্তার সুমি মেধা আর যোগ্যতাতেই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। ফারজানা আক্তার সুমি কালের আলোকে বলেন, অনেক কষ্টে বাবা আমাকে পড়াশুনা করিয়েছেন। সরকার বিনা পয়সায় আমাকে চাকরি দিয়েছে।

আমি সততার সঙ্গেই আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করবো। নিজে ঘুষ খাবো না। আমাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী ঘুরে দাঁড়াবে। মানুষের কাছে এখন দেশের পুলিশের ভাবমূর্তি প্রতিনিয়ত উজ্জ্বল হচ্ছে।’

শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছেন তারাকান্দা উপজেলার বকশীমুল এলাকার কাজল মিয়া। অর্থের অভাবে লেখাপড়া করাই ছিল তাঁর জন্য অসম্ভবের। মা ধার-কর্জা করে তাকে পড়াশুনা করিয়েছেন। ‘এ চাকরিটা আমার খুব দরকার ছিল। অন্তত আমার মায়ের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।

সংসারে স্বচ্ছলতার জন্য। আমার সামর্থ্য ছিল না টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার। কিন্তু ঘুষ ছাড়াই এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের সন্তানের পুলিশে চাকরি হয়েছে।’

জানা যায়, ময়মনসিংহের ২৫৭ তরুণ-তরুণী এখন হৃদয়ে নতুন স্বপ্ন বুনছেন। এবার তাদের যাত্রা হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ৬ মাস প্রশিক্ষণের পর তাঁরা শপথ নেবেন দেশের প্রয়োজনে জীবনবাজি রাখার। এই তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসের মাত্রা বেড়েছে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেনের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যে।

এ তরুণ-তরুণীরা বলছেন, এবার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ রীতিমতো ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশের দুর্নাম ঘুচবে। দেশের মানুষের মুখে মুখে থাকা নিয়োগ বাণিজ্যের গল্প অতীত হয়ে যাবে। সবাই এখন জানবে বাংলাদেশ পুলিশ সত্যিকার অর্থেই জনগণের পুলিশ। এখানে ঘুষ বাণিজ্যের ঠাঁই নেই।

কালের আলো/এমএইচ/এএ

Print Friendly, PDF & Email