বড় সংশোধনী ছাড়াই পাস হলো অর্থবিল ২০১৯

প্রকাশিতঃ 10:19 pm | June 29, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পুজিবাজারে প্রণোদনা ও ভ্যাটে কিছুটা সংশোধন এনে জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৯ পাস হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ কর বহাল রাখা হয়েছে। তবে বহুল আলোচিত সঞ্চয়পত্রের উপর উৎসে কর, বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে টিআইএন বাধ্যতামলূক করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তনের কোন ইঙ্গিত দেয়া হয়নি।

সংসদের ইতিহাসে প্রথম বারের মত অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতায় অর্থবিল পাস করলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা সংসদের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

শনিবার(২৯জুন) রাতে স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের কতিপয় সংশোধনী গ্রহণ করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ বিল পাসের প্রস্তাব কন্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক হ্যাঁ ভোটে পাস হয়। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান।

ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনা বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ হ্রাসের জন্য অর্থমন্ত্রী যে উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন তা অত্যন্ত সময় উপযোগী। পাশাপাশি আমার সুপারিশ থাকবে যেন ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার এক অংকের মধ্যে রাখা হয় অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিট। এটি করা গেলে শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তোলা সক্ষম হবে। কারণ, উচ্চহারে সুদ থাকলে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বিকশিত হবে না।’

দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে তাঁত শিল্পে ব্যবহৃত সুতার উপর ৫ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে প্রতি কেজি সুতায় ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট করের প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ, প্রণোদনা প্রদানে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে, সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে এর ফলে দেশীয় কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণ শিল্পের প্রণোদনা দেওয়া ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধে দেশে তৈরি হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্কহার যৌক্তিক করা হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে শুল্কহার পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া দেশি শিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশীয় মুদ্রণশিল্পে প্রণোদনা ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতে দেশে উৎপাদন হয় না এমন পেপার মিলের শুল্ক হার যৌক্তিক করা হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত কয়েকটি পণ্যের শুল্ক হারও পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তবে বহুল আলোচিত সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর কমানোর কোনো সংশোধন করা হয়নি অর্থবিলে।

এছাড়া, এতদিন ব্যবসায়ীরা উপকরণ কর রেয়াতের সুযোগ পেতেন না। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা চাইলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে উপকরণ কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন। আইনে সেই বিধান রাখা হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষ বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আপত্তি থাকলে তা প্রত্যাহারের আবেদন জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সেই হিসেবে কোনো সিদ্ধান্ত বাতিল বা যুক্ত করার বিষয়ে তিনি তার বক্তৃতায় সুপারিশ করবেন। এসব সুপারিশ চূড়ান্তভাবে বাতিল বা নতুন সিদ্ধান্ত হিসেবে নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ বাস্তবায়ন করা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।

পরে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অর্থবিল-২০১৯ সংসদে বিবেচনার জন্য উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অনুরোধে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদের সামনে অর্থবিল উপস্থাপনের আহ্বান জানান। অর্থবিলের বিলের ওপর জনমত যাচাই হয়। পরে সংসদে সবার সম্মতিতে পাস হয় অর্থবিল ২০১৯।

এর আগে বিলটি জনমত যাচাই ও প্রচারের প্রস্তাব করেন বিরোধী দলীয় কতিপয় সদস্য। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ, রওশন আরা মান্নান, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, গণফোরামের মোকাব্বির খান, বিএনপি’র রুমিন ফারহানা নিজ নিজ সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।

এ ছাড়া সরকারি দলের সদস্য আ স ম ফিরোজ, উপাধাক্ষ আব্দুস শহীদ, শহিদুজ্জামান সরকার, ইসরাফিল আলমও প্রস্তাব দেন। কয়েকটি সংশোধনী গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ বিল পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক হ্যাঁ ভোটে পাস হয়। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ও অর্থবিল- ২০১৯ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

কালের আলো/এনএল/এমএম

Print Friendly, PDF & Email