কর্নেল অলির জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র আত্মপ্রকাশ

প্রকাশিতঃ 9:25 pm | June 27, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা এই নেতার সঙ্গে বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়া নিয়ে মতানৈক্যের মধ্যেই তিনি একটি রাজনৈতিক মঞ্চের ঘোষণা দিলেন।

কর্নেল অলির নেতৃত্বে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামের এই প্ল্যাটফর্মে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে রয়েছে ২০ দলীয় জোট শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও ন্যাশনাল মুভমেন্ট। তবে নতুন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এগিয়ে চললেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটেও থাকছেন বলে জানিয়েছেন অলি আহমদ।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল, পুনজাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবীসহ ১৮ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে নতুন এ জোট গঠিত হয়েছে বলে জানান।

তিনি বলেন, আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, ১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল উদার গণতন্ত্র ; একনায়কতন্ত্র নয়। সুতরাং কোন অবস্থাতেই আমরা একনায়কতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত গনতন্ত্র মেনে নিতে পারি না।

কর্নেল অলি বলেন, বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হচ্ছে একনায়কতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, দ্বিতীয়টি হচ্ছে উদার গণতন্ত্র। সুতরাং, আমরা বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন,আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ এবং লক্ষ্য হবে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা অর্থাৎ জাতিকে মুক্ত করা তথা ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও জনগণের সরকার গঠন করা।

অলি আহমেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করতে হবে, নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আশাকরি আমাদের এই কর্মসূচিতে জনগণ এবং সকল বিরোধী দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমর্থন দেবেন,সহযোগিতা করবেন, অংশগ্রহণ করবেন।

জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, দেশের বর্তমান নাজুক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা নির্বিকার থাকতে পারি না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। বেগম জিয়া যদি কারাগার থেকে মুক্ত হন, একনায়কতন্ত্র থেকে যদি দেশ মুক্ত হয়, তখন জাতি মুক্ত হবে।

আপনারা ২০ দলীয় জোটে থাকবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে কর্নেল বলেন, ২০ দলীয় জোটের মূল দল বিএনপি। তারা তো ওই জোটে থেকেই ড. কামাল হোসেন সাথে (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) কাজ করছেন। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ কোনো জোট নয়। আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি এবং থাকব।

এসময় তার সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরীক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আহমেদ উল্লাহ ও জাতীয় আন্দোলন এর সভাপতি মুহিব খান উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে দলটি নীতি-নির্ধারকদের একজন ছিলেন। দেড় দশক আগে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠন করে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। প্রথমে আওয়ামী লীগের জোটে তারা গেলেও পরে পথ পরিবর্তন করে বিএনপির জোটে যোগ দেন। এখনও তার দল ২০দলীয় জোটে যুক্ত রয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ২০ দলের বাইরে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আলাদা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির সমন্বয়ের মধ্যে ওই নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানের পর সংসদে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা ছিল ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের। কিন্তু বিএনপি ও গণফোরামের বিজয়ীদের শপথ গ্রহণ করলে তাতে ক্ষুব্ধ হন অলিসহ অন্যরা। এই নিয়ে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার মধ্যেই কর্নেল অলি ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ গঠনের ঘোষণা দিলেন।

কালের আলো/এআর/এমএম

Print Friendly, PDF & Email