‘ক্লান্তিহীন’ খাদ্যমন্ত্রী, তাড়া নেই ঘুমোনোর!

প্রকাশিতঃ 11:02 am | June 19, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

৬৮ বছর বয়স মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের। এ বয়সেও জীবনটা ছকে বাঁধা হয়নি। মন্ত্রণালয়, দলীয় নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ আবার দেশের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ছুটে বেড়িয়ে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের খুঁটিনাটি নিজের নখদর্পণে রাখা এক অদম্য সংগ্রামী। দিনমান ব্যস্ততার যেন অবসর মেলে না রাতেও।

বাসায় ফিরেই অন্য দশজনের মতো ডিনার সেরেই শান্তিতে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ার জোঁ নেই। মন্ত্রীপাড়ার নিজ বাসভবনের ড্রইংরুমেই অপেক্ষমান মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত। কোন কোন দিন হতে পারে গভীর রাত! কিন্তু যতক্ষণ মানুষের ভিড় ততক্ষণই অবসন্ন চোখ থেকে হাওয়া নিজের পরিপূর্ণতার ঘুম!

আরো পড়ুন: উন্নয়ন ও কল্যাণের বাজেট, বলছেন এলজিআরডি ও খাদ্যমন্ত্রী

এসবই যেন নিত্যকার দিনলিপি তৃণমূল জয় করে আসা নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের। রাত বাড়লেও নিজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা লোকজনের ঘুমোতে যাওয়ার তাড়াতেও সাড়া নেই তাঁর। তাদের চেহারায় বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলেও মন্ত্রী নিজের ভেতরের ক্লান্তিকে আড়াল করেন হাসিমুখেই।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) দিনগত রাত সোয়া ১ টার চিত্রই ধরা যাক না! বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির নেতা-কর্মীদের বিদায় দিয়ে মন্ত্রী উঠবেন। এমন সময়েই সেখানে হাজির নিজ নির্বাচনী এলাকার দলটির তৃণমূলের কর্মীরা।

ফুরফুরে মেজাজেই আবারো নিজের নির্দিষ্ট সোফায় বসে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমকের মন্ত্রীসভার পুরোদস্তুর রাজনীতিক মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

ঘড়ির কাঁটা যখন রাত দেড়টার ঘরে তখনই কেবল ‘রুটিন ওয়ার্ক’ শেষ করলেন তিনি। ঘরের চৌকাঠ পেরুনোর সময়েই আবারো মন্ত্রীর চোখ বাসার গেটে। আরো কেউ আছে কীনা হাঁক দিয়েই দু’তলায় উঠে গেলেন দিব্যি ঘুমকে হার মানিয়ে পথচলা একাত্তরের রণাঙ্গণের এ বীর সেনানী।

আরো পড়ুন: ৫ খাদ্যগুদামে খাদ্যমন্ত্রীর সারপ্রাইজ ভিজিট, সতর্ক করলেন কর্মকর্তাদের!

পুরো ঘটনা প্রবাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর কালের আলোর প্রশ্নের জবাব যখন দিতে শুরু করবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ঠিক তখনই পাশ থেকে একজন কথা কেড়ে নিয়ে উপস্থাপন করলেন বিস্ময় জাগানিয়া তথ্যই!

ক’দিন আগে নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের সময় ফজরের আজানের আগ মুহুর্তেই কেবল এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে ‘ছাড়া’ পেয়েছেন মন্ত্রী।

স্মীত হেসে এবার এক নি:শ্বাসে মন্ত্রীর উত্তর-‘আসলে মন্ত্রী হওয়ার আগেও আমার এলাকায় ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই দিন-রাত কাটতো আমার। দলীয় নেতা-কর্মী আর আমার প্রাণের নওগাঁ’র মানুষজনের জন্যই তো আমি সাধন চন্দ্র মজুমদার ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, তিনবার সংসদ সদস্য ও এবার মন্ত্রী হয়েছি।

এলাকায় গেলে গভীর রাতেও আমার দূয়ারে ভিড় থাকে। আমি প্রসন্নচিত্তেই তাদের অভাব-অনুযোগ শুনি। সাধ্যমতোই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। তবে আমার এখানে তদবির বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই এটাও জানে নওগাঁর মানুষ।’

‘আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় এভাবেই কেটেছে। যতদিন সুস্থ আছি এভাবেই মানুষের পাশে থাকতে চাই’ যোগ করেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের এ সাধারণ সম্পাদক।

কালের আলো’র প্রশ্নের উত্তরে নিজের মঙ্গলবারের (১৮ জুন) যাপিত জীবনের কর্মব্যস্ততার ছক নিয়ে মন্ত্রী জানালেন, সকাল ১০ টা থেকে কর্মপ্রবাহ শুরু হয়েছিল এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। প্রায় দেড় শতাধিক এনজিও প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ফাইলপত্রের কাজ শেষে সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সফররত খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মরিয়ম আল মেহেরী’র সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এরপর সংসদ শেষ করে বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরে অপেক্ষমান মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত।’

আলাপচারিতায় খাদ্যমন্ত্রী টেনে আনেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাহরণ। বলেন, ‘‘আমার নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ঘন্টা সময় থেকে মাত্র ৫ ঘন্টা সময় নেন নিজের জন্য, ঘুমানোর জন্য। বাদ বাকী প্রতিটি মুহুর্ত দেশের মানুষের জন্য, দেশের জনসাধারণের উন্নয়নের জন্য তিনি ব্যয় করেন।

তিনি নিজেই খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন দেশের কোথায় কী সমস্যা আছে, কোথায় মানুষ সমস্যায় আছে। নিজ থেকেই জননেত্রী তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আমি আদর্শ পিতার আদর্শ কন্যার একজন কর্মী হিসেবেই তাঁর দেখানো পথে চলার চেষ্টা করছি মাত্র।’

কালের আলো/এমএইচ/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email