সরকারি গুদামে ধান দেয় প্রভাবশালীরা, নেপথ্যে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা

প্রকাশিতঃ 1:25 pm | May 26, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান নেওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে বিপরীত কাজ। কৃষকের বদলে ধান নেয়া হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের থেকে। ফলে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

প্রভাবশালীদের থেকে কৌশলে এই ধান নেওয়ার পিছনে কাজ করে করে কিছু অসাধু খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা। মূলত তাদের যোগসাজশে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গুদামে ধান দেয় বলে অভিযোগ কৃষকদের।

এ বিষয়ে একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবছর ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষি অফিস কৃষকদের একটি তালিকা তৈরি করে। তবে তালিকা করলেও সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস কৃষকের কাছ থেকে ধান নেয় না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে সিন্ডিকেটের ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়। এতে প্রতিমণ ধানে সিন্ডিকেট আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া কৃষক গুদামে ধান নিয়ে গেলেও ধানে চিটা ও পরিষ্কার না এমন অজুহাতে কৃষকদের ফিরিয়ে দেন কর্মকর্তরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জানান, ধান সংগ্রহের সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপের কারণে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান নিতে বাধ্য করা হয়। সিন্ডিকেট কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড সংগ্রহ করে ধান নেয়। ফলে প্রকৃত কৃষকরা সরকারের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বাসাইলের কলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে কার্ড পেলেও দালালদের কারণে আমাদের কাছ থেকে ধান নেওয়া হয় না। আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কখনও ধান বিক্রি করতে পারেননি।’

মির্জাপুরের তরফপুর গ্রামের কৃষক বকুল মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে ধান নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে কখনও আমাদের জানায়নি।’

সখীপুর উপজেলার কালিদাস গ্রামের বাছেদ মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবে ধান কেনার বিষয়টি জানি। শুনেছি, অনেক কৃষক গুদামে ধান নিয়ে ফিরে এসেছেন। এ জন্য হয়রানির ভয়ে কখনও ধান নিয়ে যায়নি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ৫ হাজার ২৬০ মেট্র্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে। ধান কাটা প্রায় শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। তবে এ মাসের শেষের দিকে ধান সংগ্রহ করা শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, ‘এখনও কৃষকদের তালিকা করা শেষ হয়নি। সরকারিভাবে ধান দেওয়ার বিষয়ে কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করা হয়। ধান সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা শুধু কৃষকদের তালিকা করে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠাই।’

বাসাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ বলেন, ‘উপজেলায় এবার ৩৪১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রাথমিক একটি তালিকা পেয়েছি। খুব দ্রুতই মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করা হবে।’

টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও মির্জাপুর উপজেলায় ধান সংগ্রহ করা শুরু হয়ে গেছে। দু-একদিনেই মধ্যেই বাকি উপজেলাগুলোতে ধান সংগ্রহ করা শুরু হবে।

সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনও ফড়িয়া সিন্ডিকেট বা দালালদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকেই নির্ধারিত মূল্যে ধান সংগ্রহ করা হবে।’

এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে কৃষি কাজ করেন। যাদের কার্ড রয়েছে। তারা তো সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে পারবেন। তারা যদি সরকারিভাবে ধান দিতে যায়, তখন সাধারণ মানুষ তাদেরকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মনে করে।’

ক্ষমতাসীন দলের বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকারিভাবে গুদামে ধান দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কী হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। এবার প্রকৃত কৃষক ছাড়া কেউ সরকারিভাবে ধান দিতে পারবে না।’

কালের আলো/এনএল/এমএম

Print Friendly, PDF & Email