সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিকেই শান্তি অভিযানে সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 12:13 pm | May 24, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বিশ্বশান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমে অসামান্য সাফল্যের ইতিহাস তৈরি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের নীল হেলমেট মাথায় নিয়ে অনন্য সংগ্রাম এবং প্রতিনিয়তই জীবনবাজি রাখায় সেখানে সম্মানের সঙ্গেই দেখা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদানকে।

আরো পড়ুন: হাওয়াইতে সিম্পোজিয়ামে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন কালের আলোতে

ফলে গত ৩১ বছরের আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে হয়ে উঠেছে অনুকরণীয় আদর্শের এক প্রতীক।

কঠিন পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে চলা, শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং’র (বিপসট) বহুজাতিক প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন দিক আন্ত-অভিযানে সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

আরো পড়ুন: বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কর্মতৎপরতা লাল-সবুজের পতাকার সুনামের স্মারক, বললেন সেনাপ্রধান

তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নিজ বাহিনীর আন্ত-অভিযান সক্ষমতার ওপরই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিকেই শান্তি অভিযানে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে মনে করেন।

তাঁর ভাষ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ বা অন্য যেসব দেশ বহুজাতিক কর্মকাণ্ডে ভালো করতে চায়, তারা তাই আন্ত-অভিযান সক্ষমতা বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবে। তাছাড়া অংশীদার দেশগুলোর সমর্থনে কোনো আভিযানিক দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির মাত্রা নির্ণয়ের জন্য আন্ত-অভিযান সক্ষমতা অনন্য মাপকাঠি হিসেবে থাকবে।

আরো পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধ ও সেনাবাহিনীর আন্ত-অভিযানের সূচনার ইতিকথা জানালেন সেনাপ্রধান

মঙ্গলবার (২১ মে) মার্কিন অঙ্গরাজ্যের সবুজ দ্বীপ হাওয়াইয়ের রাজধানী হুনুলুলুতে অনুষ্ঠিত ‘ল্যান্ড ফোর্সেস অফ দ্যা প্যাসিফিক সিম্পাজিয়াম এবং এক্সপজিশন (লেনপেক) এ ‘ল্যান্ড ফোর্স ইনক্রিজড ইন্টার প্যারাবিলিটি উইথ এলাইস এন্ড পার্টনারস’র একজন প্যানেল মেম্বার হিসেবে নিজের লিখিত নিবন্ধে এসব কথা বলেন।

১৯৮৮ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী জোগানে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হয়ে উঠেছে দেশটি। ইরাক-ইরানের সশস্ত্র সহিংসতা বন্ধে কাজ শুরুর মধ্যে দিয়ে এ দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যেখানেই কাজ করেছেন, কর্ম আর দক্ষতায় সেখানেই নিজেদের সেরা প্রমাণ করেছেন।

নিরাপত্তা প্রদান থেকে শুরু করে সড়ক নির্মাণ, সহিংস দেশগুলোর সরকার ও জনগণকে সহযোগিতা করার নিরলস কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সুনাম অর্জন করেছেন। সেই সিম্পোজিয়ামে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা, উৎকর্ষ ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন সেনাবাহিনী প্রধান। সেমিনারে প্রশংসিত হয়েছে তাঁর তথ্য ও যুক্তি নির্ভর বক্তব্য।

আরো পড়ুন: বিশ্বমঞ্চে শান্তিরক্ষায় নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনালেন সেনাপ্রধান

সিম্পোজিয়ামে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, একাধিক মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে বহুজাতিক পরিবেশে কাজ করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্ত-অভিযান দক্ষতা বাড়ানোর জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্ত-অভিযান দক্ষতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বর্তমান অর্জন অবিচল চেষ্টা, উৎসর্গ, প্রণোদনা ও সাংস্কৃতিক অভিযোজনের ফল।

আন্ত-অভিযান সক্ষমতা অর্জনে প্রশিক্ষণকে অতি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একাধিক অংশীদারের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবধান কমায় এবং দক্ষতা বাড়ায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিপসট এ-প্রাক মোতায়েন প্রশিক্ষণ চলাকালে ব্যাপক তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নেয়।

সেখানে মিশন ম্যান্ডেট, আভিযানিক ধারণা এবং সম্পৃক্ততার নিয়মকানুনের বিশদ ব্যাখ্যা এবং মহড়া দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বহুজাতিক অংশীদারের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে আন্ত-অভিযান সক্ষমতা বাড়াতে কৌশল ও পদ্ধতির নিয়মিত মূল্যায়ন করে এবং শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: শান্তিরক্ষা মিশনে সাফল্য-অন্তরায়ের কারণ বললেন সেনাপ্রধান

বিপসট বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড এবং বিশ্বশান্তি উদ্যোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত যৌথ অনুশীলনে বহুজাতিক অংশীদারের সঙ্গে বড় মাত্রায় প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমাদের সেনাবাহিনীর আন্ত-অভিযান সক্ষমতা বাড়াতে এসব কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

বিদেশে অভিযান শেষে ফিরে হাতগুটিয়ে বসে থাকে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কন্টিনজেন্টসমূহ। বরং তাঁরা আভিযানিক সমস্যা এবং অর্জিত জ্ঞান লিপিবদ্ধ করে জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের বিদেশি অভিযানবিষয়ক পরিদপ্তর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও শান্তি অভিযানের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ ও সংশোধন করে থাকে। এই চলমান প্রক্রিয়াটি আন্ত-অভিযান সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করছে।

বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের কর্মকর্তারা নিজেদের পাশাপাশি মিত্র ও অংশীদার দেশগুলোর মতবাদও শিখতে পারে। অন্যান্য দেশের মতবাদের প্রাসঙ্গিক দিকগুলোর অন্তর্ভুক্তি আমাদের মতবাদকে দৃঢ় করেছে। আর তা আমাদের সেনাবাহিনীকে কঠিন পরিবেশে কাজ করতে সক্ষম করে গড়ে তুলছে।’

আরো পড়ুন: ঐকতানেই মিশনের সাফল্য, দ্বন্দ্বে বিঘ্ন, বলছেন সেনাপ্রধান

আন্ত-অভিযান সক্ষমতা বাড়াতে বিপসট আয়োজিত বহুজাতিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য দেশের স্থলবাহিনীর সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণ করে থাকে সেই তথ্য জানিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, তুরস্ক, কুয়েত, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যৌথ কমান্ড পোস্ট এক্সারসাইজ, স্পেশাল ফোর্সেস এক্সারসাইজ এবং ফায়ার অ্যান্ড ম্যানুভার এক্সারসাইজ পরিচালনা করি।

সাধারণ কৌশলের পাশাপাশি আমাদের সৈন্যরা মিত্র ও সহযোগীদের সমাজ, সংস্কৃতি ও ভাষার বৈচিত্র্য সম্পর্কেও শিখে থাকে। এ শিক্ষা প্রকৃত অর্থেই আন্ত-অভিযান সক্ষমতা বাড়ানোতে ভূমিকা রাখছে।’

কালের আলো/এএ/এএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email