তিন মোবাইল অপারেটরকে ১৫ কেটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিতঃ 5:29 pm | May 19, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

মন্ত্রীসহ অনেকের নম্বর অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়া এবং বায়োমেট্রিক্স ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে সিম নিবন্ধনের নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা ও বাংলালিংককে পাঁচ কোটি টাকা করে মোট ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

জরিমানা করার সিদ্ধান্ত গত ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত সংস্থাটির ২২৪তম সভায়ই হয়েছিল। তবে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করতে বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২২৬তম সভায় এই জরিমানার পরিমাণ চূড়ান্ত করা হয়।

বৈঠক পরবর্তী বিটিআরসি থেকে তিন মোবাইল ফোন অপারেটারকে পৃথক চিঠিতে ওই অর্থদণ্ডের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে মোবাইল অপারেটরগুলোকে গ্রাহকদের ডাটাবেজ ব্যবহারে আরও শতর্ক ও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কোনভাবেই যাতে একজনের নাম পরিচয় ব্যবহার করে অন্য কেউ সিম ব্যবহার করতে না পারে সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

বিটিআরসির সভায় শাস্তির প্রস্তাব করে বলা হয়, অপারেটর দুটি তাদের প্রতি ইস্যু করা থ্রিজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ-৪৯ এবং ৪-জি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ-৩৭-এর শর্তাবলি লঙ্ঘন করেছে।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে উদ্বেগজনক এসব অভিযোগ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলেছে, সরকারের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অপারেটরগুলো এমন কিছু করছে, যা রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অপারেটরদের কর্মকাণ্ডে অনেক গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জানা গেছে, গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে বিটিআরসি গত ২৭ জানুয়ারি রবির কাছে ই-মেইলে তিনটি মোবাইল ফোন নম্বরের নিবন্ধন ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। রবি ওই দিনই বিটিআরসিকে ই-মেইলে এ বিষয়ে তথ্য জানালেও দুটি নম্বরের বিষয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। এ ছাড়া ওই সিমের নিবন্ধনের তথ্য সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিকস ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মে (সিবিভিএমপি) দেওয়া হয়নি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলামও এর ভুক্তভোগী। তাঁদের ‘প্রিমিয়াম’ মোবাইল ফোন নম্বর অন্য গ্রাহককে দিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে বিটিআরসি ব্যাখ্যা চাইলেও সংশ্লিষ্ট অপারেটর বাংলালিংক গড়িমসি করে, মিথ্যারও আশ্রয় নেয়।

বাংলালিংকের দুই গ্রহক- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ ব্যবহার করে অন্য গ্রহকের সিম নিবন্ধনের বিষয়টি বিটিআরসির নজরে আসে।

গত বছরের ২২ অক্টোবর শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করেন, তার নাম্বারের একটি সিম অবৈধভাবে অন্য এক গ্রাহক ব্যবহার করছে। এ ব্যাপারে তিনি বাংলালিংকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অপারেটরটি ওই অনিয়মের কথা স্বীকার করে। তবে এসব অনিয়মের জন্য তারা সেলস এজেন্টকে দায়ি করেছে।

আর গ্রামীণফোন একটি বিশেষ নম্বর (শেষ আটটি ডিজিট একই নম্বরের) সম্পর্কে সিবিভিএমপি সার্ভারে ২০১৬ সালের বাল্ক মাইগ্রেশন তথ্য ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই। কিন্তু অপারেটরের তথ্য অনুসারে ওই নম্বরটির মালিকানা ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর পরিবর্তন হয়েছে। এ বিষয়ে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি। বিটিআরসিকে না জানিয়ে গত বছর ১ জুলাই ও ৫ নভেম্বর ওই নম্বর বা সিমটির মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় ও জননিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে বিটিআরসি এই তিন অপারেটরকে ৫ কোটি করে মোট ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে মোবাইল সিম কেনার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন বধ্যতামূলক করে সরকার। তবে এর পর থেকেও সিম নিয়ে জালিয়াতি কমেনি। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এই জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

কালের আলো/এটিআর/এমএম

Print Friendly, PDF & Email