আইনজীবী পলাশের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশিতঃ 2:02 pm | May 08, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

কারা হেফাজতে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনায় পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে বিচারিক তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পঞ্চগড়ের মুখ্য বিচারিক হাকিমের তত্ত্বাবধায়নে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে ওই ঘটনার বিচারিক তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে আদেশে।

বুধবার(৮ মে) এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেয়।

শুনানিতে বিচারক বলেন, ‘এটা হত্যা বা আত্মহত্যা যাই হোক না কেন, এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দরকার। কারাগার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা। সেখানে কেরোসিন বা পেট্রোল কীভাবে যেতে পারে, কীভাবে তা দিয়ে গায়ে আগুন দেওয়া সম্ভব তা তদন্তে বেরিয়ে আসা উচিৎ।’

রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন নিজেই শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান। আগামী ২৩ জুন এ মামলা পরবর্তী আদেশের জন্য আবার আদালতে উঠবে বলে জানিয়েছেন সুমন।

কোহিনূর কেমিকেলসের আইন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা পলাশ কুমার রায় ঢাকা বারের সদস্য ছিলেন। ওই কোম্পানির ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলাটি প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫ মার্চ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনশনে বসেন পলাশ।

পরে শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে মানববন্ধনে হ্যান্ডমাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রশাসন ও পুলিশকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে রাজীব রানা নামে এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পলাশের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আগের মামলাটির শুনানির জন্য পলাশকে গত ২৬ এপ্রিল পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সকালে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে চিকিৎসাধীন পলাশ ৩০ এপ্রিল দুপুরে মারা যান।

পলাশের মা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মীরা রানি রায় অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। দুইজন তার গায়ে তরল কিছু ঢেলে আগুন দিয়েছে বলে মৃত্যুর আগে বলে গেছে পলাশ।

তবে পঞ্চগড় জেলা কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, অসুস্থ পলাশকে সেদিন কারা হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। ওই হাসপাতালের বাথরুমে গিয়ে পলাশ নিজের শরীরে আগুন দিলে কারাগারের লোকজন আগুন নিভিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠায়।

এ আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় গত সোমবার বিচারিক তদন্ত দাবি করে আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর শুনানি করেই আজ পলাশের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক তদন্তের আদেশ দিল আদালত।

কালের আলো/এনএল/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email