মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তরুণ সমাজের আর্জি শুনুন প্লিজ

প্রকাশিতঃ 1:31 pm | February 27, 2018

শেখ আদনান ফাহাদ:

আসসালামু আলাইকুম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আশা করি ভালো আছেন। যদিও সাধারণ মানুষের মত আরামে থাকার সুযোগ আপনার নেই। ১৬ কোটি আত্মঘাতী মানুষের দায়িত্ব যে আপনার কাঁধে। একটি বিস্মৃতিপ্রবণ জাতিকে আপনি নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। এমন জাতির নেতা আপনি, যে জাতির প্রায় সবাই শুধু এখন নিজের ভালোটাই আগে বুঝে। বিদেশি নাটক-সিরিয়াল আর ধর্মের আফিম খেয়ে যে জাতি নেশাগ্রস্ত তাকে জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব আপনি পালন করছেন। অনেকাংশে সফল হচ্ছেন। আবার আমাদেরই বিশ্বাসঘাতক স্বত্ত্বার বেইমানিতে মাঝে মাঝে বড় ধাক্কা খাচ্ছেন। তবু আপনি বিশাল দরিয়ায় আপনার নৌকায় সবাইকে বহন করে চলেছেন। মজলুমের ভরসা এখন আপনিই।

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আজ আপনাকে লিখতে বসেছি। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি চেয়ে সংঘটিত শাহবাগের ‘গণজাগরণ’ খ্যাত আন্দোলন নিঃসন্দেহে আমাদের প্রজন্মের দেখা সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন, সন্দেহ নেই। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখ শাহবাগসহ সারাদেশে দেশবাসী যে গণআন্দোলনের সাক্ষী হলো, সেটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত। গণজাগরণে অংশ নিয়েছিল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শ্রমিক, গৃহবধূ, চাকরিজীবীসহ সমাজের নানা পেশা ও শ্রেণির প্রতিবাদী মানুষ। আর ২৫ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের প্রধান চরিত্র হলো, এই আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিল সারাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা। দলমত নির্বিশেষে, এদিন শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিল দেশের প্রায় সব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলে-মেয়েরা। তাদের দাবি, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা প্রথায় সংস্কার আনতে হবে।

সারাদেশে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছেলে-মেয়ের সংখ্যা কত ছিল? সহজ করে বলা যায়, কয়েক লাখ হবে। ঠিক হিসেব করে বলা মুশকিল। তবে এই কয়েক লাখ ছেলে-মেয়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা পড়াশোনা শেষ করেছে কিংবা করার পথে। বিবিএসের হিসাবে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৭ লাখ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। বাকি ২৭ লাখ বেকার। অবশ্য তাদের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করে কিন্তু কোনো মজুরি পান না এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ। এছাড়া আছে আরও ১ কোটি ৬ লাখ দিনমজুর, যাদের কাজের নিশ্চয়তা নেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী এরাও বেকার। এ হিসাবে বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী বেকারের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ কোটি ৪৪ লাখ।

আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গত ৯ বছরে সরকারি চাকরির প্রক্রিয়ায় বলতে গেলে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। নিয়মিত নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করে, প্রায় ১২৩ গুণ বেতন বৃদ্ধি করে তরুণ সমাজের ভেতরে সরকারি চাকরির প্রতি এক দুর্নিবার আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। এরই অনিবার্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে তরুণ সমাজের ভেতরে নিজেদের অধিকারবোধ জাগ্রত হয়েছে। অধিকারবোধ থেকে তরুণ সমাজের চিন্তা কেন্দ্রীভূত হয়েছে সরকারি চাকরিকে কেন্দ্র করে। ভালো বেতন, রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক সম্মান, নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক আয়োজন, বিশেষ করে বিসিএসে তুলনামূলক স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, চাকরির নিরাপত্তা ইত্যাদি কারণ মিলে সরকারি চাকরি নিয়ে ছেলে-মেয়েদের আগ্রহ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতিটি ভালো কাজেরও নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষিত বেকার, বেসরকারি চাকরিজীবী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটা অংশ, দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের বড় প্রতিনিধি, সাবেক আমলা সবাই কোটা প্রথার সংস্কার দেখতে চান।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা মনে করি, ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলন একই সাথে যৌক্তিক এবং বিশাল। কোটা সংস্কারের দাবির সাথে একমত পোষণ করে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিতজন। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা একেকজন সমাজে ওপিনিয়ন লিডার বা মতমোড়ল হিসেবে কাজ করে। দেশের সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ ও দুর্নীতিবাজ অপশক্তির বিরুদ্ধে এই তরুণ-তরুণীরা একেকজন তাকতদার সিপাহি হিসেবে কাজ করে। বলতে গেলে এই তরুণ-তরুণীরাই দেশের মেরুদণ্ড। বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় শক্তি হলো, এদেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ কমবয়সী ছেলে-মেয়ে। পুরো দেশের তরুণ সমাজের বহুদিন ধরে মূল আলোচ্য বিষয়, এই কোটা প্রথার সংস্কার। ফেসবুকের শক্তিতে তরুণ সমাজ একটি বিশাল প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়েছে। ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে এখন পর্যন্ত সদস্য সংখ্যা দুই লাখ ১ হাজার ঊনষাট জন। আমাদের জানামতে এর চেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে আর নাই। এই সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। সংখ্যার বিশালত্বকে জাতির প্রধান নেতা, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার বিবেচনায় আনা জরুরি বলে মনে করি। কে না জানে, নেতা হিসেবে আমাদের প্রজন্মের কাছে আপনার সমকক্ষ জীবিতদের মধ্যে আর কেউ নাই। পুরো জাতি এখন শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্ন আপনি নিজেই দেখিয়েছেন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অনিবার্য অংশ তরুণ সমাজের কথা তাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাকে শুনতে হবে।

বিশালত্বের পাশাপাশি, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। কোটা থেকে সরকারিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না; তদুপরি খালি থাকা পদে সাধারণ মেধা তালিকা থেকেও যোগ্যদের ডাকা হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যদি প্রকৃত পরিস্থিতি জানেন, তাহলে আমাদের বিশ্বাস আপনি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত দেবেন। যারা শেখ হাসিনাকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসেন, তার এবং দেশের ভালো চান, তারা নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রীকে বাস্তব পরিস্থিতি অবহিত করবেন। যারা শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে চান, তারাই কেবল সত্য পরিস্থিতি গোপন রাখতে চাইবেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন যৌক্তিক, সেটি আমি নিচে কিছু পরিসংখ্যানের আলোকে তুলে ধরছি। সরকা‌রি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ নি‌য়োগ হচ্ছে কোটারভি‌ত্তি‌তে এবং ৪৪ শতাংশ মেধায়। মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সন্তান ও পোষ্যর ৩০ শতাংশ আর আদিবাসীর ৫ শতাংশ কোটায় অনেক ক্ষে‌ত্রেই পরীক্ষার্থী মেলে না। প্রতি বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে গড়ে ৫০০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু অংশ নেন সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী। কোটা পদ্ধতির কারণে কেউ যদি সা‌ড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২৬তম হন, তাহলে তিনি চাকরি না-ও পেতে পারেন। কারণ ৫০০ পদের মধ্যে মেধা কোটায় ২২৫ জনকে দেয়া যাবে। কাজেই ২২৬তম হয়ে তিনি চাকরি পাবেন না। আবার কোটা থাকলে কেউ সাত হাজারতম হয়েও চাকরি পেতে পারেন। সবচে‌য়ে দুঃখজনক হল, কোটার প্রার্থী না পাওয়া গে‌লে ওই পদগু‌লো শূন্য রাখ‌তে হয়। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮ থেকে ৩৫তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে পাঁচ হাজার পদ খালি থেকে গেছে। ৩২তম বিসিএস আমাদের চোখ আরও খুলে দিয়েছে। শুধুমাত্র কোটার শূন্য পদগুলো পূরণ করতে মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী ও মহিলাদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। অথচ ওই বিসিএসেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮১৭টি, মহিলা ১০টি ও উপজাতির ২৯৮টিসহ মোট এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এমন অযৌক্তিক কাজ কেন বছরের পর বছর ধরে চলবে? আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুরো জীবন মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জালিমের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে জাতির জনক ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীকে হতাশায় রেখে কি ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বাস্তবায়ন সম্ভব? ১৯৭১ সালে দেশের সকল দক্ষ ও জ্ঞানী ব্যক্তিবৃন্দকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর তাদের স্থানীয় দোসর জামায়াত, আলবদর, আলশামসের খুনিরা। এরপর জাতির জনক এবং জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালে। এরপর থেকে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এদেশে সকল রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, খুনিদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। আপনার সরকার ক্ষমতায় এসে নানা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে। অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আপনি আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ উভয়কেই ধীরে ধীরে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন। আপনার এই সংগ্রামে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সমস্ত সহযোগী এবং ভ্রাতৃত্বপ্রতিম সংগঠন শামিল হয়েছে।

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সবাই তো সংগঠন করবে না, অনেকে করতে চেয়েও সিন্ডিকেটের জন্য পারে না। ১৬ কোটি মানুষের কয়জনেরই দলীয় পদ আছে? কোটি কোটি মানুষ আপনাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে, বরং দলীয় পদধারী অনেক দুর্বৃত্ত আপনার সুনাম নষ্ট করছে। ইতোমধ্যে জরিপে প্রমাণিত হয়েছে, সরকার এবং দল থেকেও আপনি মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তাই আপনার কাছেই আমাদের প্রত্যাশা বেশি।

সামনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকতে পারলে, এই দেশের কী হবে, আমাদের মত সাধারণ মানুষের কী হবে? পুরো বিশ্বে বাংলাদেশ ছাড়া আমাদের আর থাকার ব্যবস্থা নাই। এদেশের অনেক হিন্দু ভারত চলে গেছে বা চলে যাওয়ার ফন্দি আঁটছে। অন্যদিকে অবস্থাসম্পন্ন মুসলমানেরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে বাড়ি করে ফেলেছে। আদর করে এরা একে বলে ‘সেকেন্ড হোম’। ফার্স্ট হোম লুট করে এরা সেকেন্ড হোম বানায়। আমাদের কোনো সেকেন্ড হোম নাই। জীবনে-মরণে এই বাংলাদেশই আমাদের মত পরিবারগুলোর একমাত্র ঠিকানা।

আমার বাবাও মুক্তিযোদ্ধা। শুধু তাই নয়, আমার বাবা একজন ভাষাসংগ্রামীও ছিলেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধার মত তিনিও বয়সজনিত কারণে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে আমার বাবা চাইতেন একটি সমতাভিত্তিক সমাজ। তিনি আপনার স্বাক্ষর ছাড়া সনদ নেবেন না বলে ১৯৯৬ সালের আগে সনদের জন্য আবেদন করার জন্য আমরা তাঁকে রাজিই করাতে পারিনি। সেই সনদ দরকার ছিল, বাবার স্বীকৃতির জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভর্তি বা চাকরির জন্য এই সনদ কখনো ব্যবহার করিনি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার ছেলের জন্য এই সনদের সুবিধা লাগবে না। আপনার নিজেরই তো নিজস্ব বাড়ি-ঘর-সম্পত্তি নাই। আপনার মাঝে আমরা আমাদের মা-বোনের মুখ দেখি। রাজনীতিবিদদের এদেশের তরুণ-তরুণীরা বিশ্বাস করতে চায় না। সেখানে আপনি ব্যতিক্রম। দরকার হলে আরেকটা গোপন জরিপ করে আমার কথা আপনি যাচাই করে নিতে পারেন।

গরিব মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য কোটা সুবিধা দরকার ছিল। শহীদ এবং গাজী মুক্তিযোদ্ধারা বাড়িঘর, চাকরি, বউ-বাচ্চা, স্বামী ফেলে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কোটা সুবিধা এবং ভাতা দরকার ছিল, এখনো আছে। কিন্তু কোনোক্রমেই আর ৩০ শতাংশ নয়। আপনি নিশ্চয় জানেন, এদেশের মানুষের একটা অংশের রক্তে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। এরা দুনম্বরি ছাড়া কোনো কাজই আর চিন্তা করতে পারে না। কিছু মহান মুক্তিযোদ্ধা নিজের বিবেক বিসর্জন দিয়ে এখন স্রেফ ধান্দাবাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এরাই সারাদেশে ভুয়া লোকজনকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে দিচ্ছে। প্রতিবছর এদেশে মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীর সংখ্যা বাড়ছে। এই নতুন সনদধারীদের জন্য অনেকে এখন আমাদের বাবাদেরও ভুয়া বলে গালি দেয়। অনেক রাজাকার পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সেজে যাচ্ছে, আবার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলতে বসেছে। পুরো সমাজে এখন কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। সবার মাঝে এখন দুনম্বরি করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সবাই যেন শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখছে। এত সামাজিক হতাশার মধ্যে একমাত্র ভরসা হয়ে আসতে পারে তরুণ সমাজের ভেতরে কর্মচেতনার জাগরণ।

আপনার নিশ্চয় মনে আছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আপনাকে বিজয়ী করতে তরুণ সমাজ ভোট দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রথম সুবিধাভোগী এই তরুণ সমাজ। এই তরুণ সমাজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের একেকজন অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করতে পারে, অনেকে করছেও। আপনার প্রতিটি উন্নয়নকাজের সঠিক বার্তা দেশের সাধারণ মানুষের মনে ও মগজে পৌঁছে দেয়ার জন্য তরুণ প্রতিনিধিদের চেয়ে অধিক কার্যকর আর কেউ হতে পারে না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে আরও দুর্বল করার জন্য তরুণ সমাজের মনের কথা আপনি মন ও মগজ দিয়ে শুনবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Print Friendly, PDF & Email