মমেক ক্যাম্পাসে নির্ভার আনন্দধারায় ভাসলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 6:25 pm | April 14, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

ক্যাম্পাসের প্রতিটি পথ তাঁর চেনা। দীর্ঘ ৮ টি বছর কেটেছে এই ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে। সেই স্মৃতি তো ভুলার নয়। ফলে প্রায় দেড় যুগ পর নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে রীতিমতো আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা: লোটে শেরিং। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে ভাসলেন নির্ভার আনন্দধারায়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে (মমেক) শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি, সংগ্রাম করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া, চিকিৎসকের হেয়ালীপনায় অসুস্থ হওয়া, অস্ত্রোপাচার করে হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে থাকা, পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরে রাজনীতি অত:পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সব কথাই গল্পচ্ছলে বললেন ডা: লোটে শেরিং।

বন্ধুদের স্মরণ করিয়ে দিতে ভুল করলেন না তাদের ডাকেই তিনি এসেছেন তারুণ্যের ক্যাম্পাসে। আবার শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিয়ে গেছেন। বলেছেন, ডাক্তার হওয়ার আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা: লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) ২৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১১ টার দিকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আসেন।

এদিন বেলা ১২ টার দিকে কলেজ অডিটরিয়ামে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডা: লোটে শেরিং শিক্ষার্থীদের পরামর্শ ছাড়াও নিজের শিক্ষা জীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরেন। কলেজ অডিটোরিয়ামের অনুষ্ঠান শেষে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেন এবং তাদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন।

‘আমি ১৯৯১ সালের নভেম্বরের দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। তখন আমার বন্ধুরা ইতোমধ্যেই তাদের কোর্স শুরু করে দিয়েছে। আমি ৪ থেকে ৫ মাস বিলম্বে এসেছিলাম’ শুরুতেই বলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

এরপর গ্রুপ স্টাডির আদলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পড়াশুনা করা, একটি চাপ্টার তিনবার পড়া কোন কিছুই বাদ দেননি লোটে শেরিং। বলেন, ‘আমি একটি চ্যাপ্টার তিনবার করে পড়তাম। অথচ তখন আমার বন্ধুরা কষ্ট করে একবার পড়া শেষ করতো। আলোচনার মধ্যে দিয়েই শিখতে হয়। এবং যদি কিছু শিখতে চাই সেটা অল্পতে শেখা সম্ভব নয় বলেন মমেকের এই সাবেক শিক্ষার্থী।

ছাত্রাবস্থায় অসুস্থ হওয়ার ঘটনা প্রবাহ বলেন লোটে। আর এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা রোগীর কোন বিষয় অতি সহজভাবে নিলে রোগীকে চরম মাশুল গুণতে হয় সেই কথাও বলেন লোটে শেরিং। তাঁর এই বিষয়ে বক্তব্য হচ্ছে- তিনি তখন হোস্টেলের ওয়েস্ট ব্লকের ২০ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তৎকালীন আবাসিক চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি বেশি কথা না শুনেই শুধু তাকে ওমিপ্লাজল এবং ব্যাথানাশক ওষুধ দিয়ে বিদায় করেন।

অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরের দিন তিনি আবারো ওই চিকিৎসকের কাছে যান। ওই চিকিৎসক তাকে স্টুডেন্ট কেবিনে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু এরপরেও কোন চিকিৎসকই তাঁর দিকে নজর দিচ্ছিলেন না। হঠাৎ সার্জারীর এক চিকিৎসকের নজরে আসেন তিনি। তিনি তাঁর রোগ সনাক্ত করেন।

এবং তাঁর অ্যাপেনডিসাইটিসের অপারেশন করা হয়। ডা: লোটে শেরিং বলেন, আসলে আমরা আমাদের কাজটা একটু হাল্কাভাবে নিলে আরেকজনের জীবনের মূল্য দিতে হতে পারে। সেজন্য অবশ্যই ব্যাপারগুলোকে সিরিয়াসলি নিবেন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার চেয়ে চার ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: টান্ডি দরজি। আমি ও তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ওয়েস্ট ব্লকের ২০ নম্বর কক্ষে থেকেছি। এখনো একসাথে আমরা রাজনীতি করছি। এ র্দীঘ সময়ে আমাদের মাঝে কোনদিন কোন মনোমালিন্য হয়নি। আজকে তাঁর কারনেই আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। তিনিই আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।

এদিন সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে ময়মনসিংহে পৌঁছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। কলেজ শিক্ষার্থীরা তাঁকে স্বাগত এবং বন্ধুরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা: আনোয়ার হোসেন তাকে একটি ক্রেস্ট উপহার দেন এবং এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

এই সময় বক্তব্য রাখেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও স্বাস্থ্য সচিব জি.এম সালেহ উদ্দিন। মঞ্চে ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজি, স্বাস্থ্য মন্ত্রী লায়োনপু দিহেন ওয়াংমু, প্রধানমন্ত্রী সহর্ধমিনী ডা. উগেন ডেমা, জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/পিনই/এএ

Print Friendly, PDF & Email