পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে ডাকসাইটে সাংবাদিক মানিকের উপন্যাস

প্রকাশিতঃ 1:31 am | February 23, 2018

উবায়দুল হক, কালের আলো:

তৃণমূল থেকেই সাংবাদিকায় উঠে এসেছেন আমিরুল মোমেনীন মানিক। সাংবাদিক হিসেবে সাফল্যের একের পর সিঁড়ি পেরিয়ে লেখালেখিতেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় অন্যান্যবারের মতো এবারও অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন মানিকের নতুন বই।

এক রোহিঙ্গা তরুণীর লড়াই-সংগ্রাম এবং রাখাইন নামের একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দুর্দান্ত শিহরণ জাগানিয়া উপাখ্যান রচনা করেছেন তিনি। তাদের দু:খগাথা ফুটিয়ে তুলেছেন ‘রোহিঙ্গা তরুণী’ নামের উপন্যাসে। মেলার বাংলা একাডেমি চত্বরে অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ৬৭ নম্বর স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৬৭০ নম্বর স্টলে উপন্যাসটি পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বইপ্রেমিরা।

মেলার শেষ বেলাতে তরুণ এ ঔপন্যাসিকের লেখা ‘রোহিঙ্গা তরুণী’ পাঠকের মনের খোরাক মিটিয়েছে। গত ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে মেলায় লেখকের উপস্থিতির খবর পেয়েই ঝাঁকেঝাঁকে আসতে শুরু করেন তার পাঠকরা। এতে দুই ঘণ্টার মধ্যেই সবগুলো বই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বইটির জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষাতেও নূন্যতম বিরক্তি ছিল না পাঠকদের।

একজন জানালেন, মানিক ভাইয়ের বই মানেই নতুন কিছু। তার লেখার যে নান্দনিকতা তা শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তার লেখা ভীষণভাবে টানে।

সাকিব নামে আরেক পাঠক জানান, তরুণ ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক মানিক আমাদের নতুন প্রজন্মকে শেখাচ্ছেন জীবন উদযাপনের মঞ্চ।

উপন্যাসটির বিষয়ে লেখক জানান, নিপীড়িত-নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের যে সংকট এটি উত্তরণের পথ দেখানো হয়েছে বইটিতে। এখানে স্বপ্নের কথা, তাদের নিজস্ব আবাসভূমি তৈরি এবং বৈশ্বিক সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  জঙ্গিবাদ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে একটি তফাৎ রেখা টানা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান, জাতিসংঘের ভূমিকা, অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রের অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে এর মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ এখানে দেখানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে এবং তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করার একটা প্লাটফর্ম পেয়েছে। বর্তমান ঘটনাগুলোকে সামনে রেখে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যা-সমাধান ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের একটা রূপরেখা দেয়া হয়েছে।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় জন্ম বহুমুখী প্রতিভাবান আমিরুল মোমেনীন মানিকের। বেড়ে উঠেছেন উপজেলার এক নিভৃত শ্যামল গাঁও গোবিন্দপুর নাংলা কাঠপাড়া গ্রামে ।

তার পিতা মুহাম্মদ জামালউদ্দিন ছিলেন স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক। সরকারি চাকুরে ছিলেন মা মিসেস রোকেয়া জামাল। সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে মানিক জামালপুরের মেলান্দহ উমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হন। এরপর আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স করেন মানিক।

আমিরুল মোমেনীন মানিকের সাংবাদিকতা শুরু ২০০০ সালে মেলান্দহ বার্তা নামের একটি পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে। দৈনিক সোনার দেশসহ বেশ ক’টি পত্রিকায় কাজ করার পর ২০০৬ সালে বৈশাখী টেলিভিশনে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হন। দিগন্ত টেলিভিশনে ছিলেন বিশেষ প্রতিবেদক। বর্তমানে তিনি মাই টিভির বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি টিভি টক-শো উপস্থাপনা এবং খবর পাঠ করেন তিনি।

বই মেলায় প্রকাশিত  ‘রোহিঙ্গা তরুণী’ উপন্যাসটি পাঠক মনে সাড়া ফেলায় খুশির ঝিলিক তরুণ লেখক মানিকের মুখয়বে। আত্নতৃপ্তি নিয়ে তিনি বলেন, গত প্রায় ১২ বছর যাবত প্রতি বই মেলাতেই আমার বই বের হয়। এতোমধ্যেই আমার একটা পাঠকগোষ্ঠি তৈরি হয়েছে। যারা একবার আমার বই পড়েছেন তারা পরের বই মিস করেন না।

মানিক জানান, এবারের বইটি যেহেতু একটি সমসাময়িক বিষয়কে কেন্দ্র করে এজন্য অনেকের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যারা পড়ছেন তারা ভাল রিভিউ দিচ্ছেন এবং সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে আসছেন বইটি কিনতে। যারা আসছেন তাদের বেশীরভাগই আমার নতুন পাঠক। এটি অবশ্যই আনন্দের বিষয়।

‘রোহিঙ্গা তরুণী’ ছাড়াও কালো প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে আমিরুল মোমেনীন মানিকের ‘সবুজ পরীর গান’ আরেকটি বই। এটি শিশুতোষ ছড়া গানের বই।

লিখালিখিতে মানিক সমাজের নানা অসঙ্গতি ও বাস্তবতা তুলে ধরেন সমকালীন ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মাধ্যমে। তার লেখা বইগুলো হলো: সুর-সঞ্চারী (২০০২), ইবলিস (২০০৫), ব্লাডি জার্নালিস্ট (২০০৮), বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় স্টুপিড শিক্ষক (২০১২), রাজনীতির কালো শকুন (২০১৩), বঙ্গবীর এক্সপ্রেস (২০১৪), জনচাকর (২০১৫), মুখোশপরা মুখ (২০১৫), খবরের ফেরিওয়ালা (২০১৬), সাংবাদিক সাংঘাতিক (২০১৭)।

আমিরুল মোমেনীন মানিক ইতোমধ্যে জীবনমুখী ও ব্যতিক্রমী গানের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন । এ পর্যন্ত তার ৮টি এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। অবাক শহরে (২০১৩), আয় ভোর (২০১৫) ও মা (২০১৫)-এই ৩টি গানের এ্যালবামের মাধ্যমে পরিচিতি পান মানিক। দুই বাংলার নন্দিত সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতার সঙ্গে তার গাওয়া গান ‘আয় ভোর’, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

 

কালের আলো/ওইচ/এমকে

Print Friendly, PDF & Email