অনুমোদনহীন ঊর্ধ্বমুখী ভবন থাকবে না: গণপূর্তমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 5:56 pm | April 06, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘কোনো ভবন হয়ে যাওয়ার পর বলবে ভবনটি অবৈধ সেটা হবে না, রাজউকের যে অফিসার ওই অঞ্চলের দায়িত্বে থাকবে তাকে দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। যে ডেভলপার কোম্পানি কাজ করবে তাকেও দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। তবে কোনভাবেই অনুমোদনহীন ঊর্ধ্বমুখী ভবন থাকবে না। সেগুলোর বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা গ্রহণ করার আমরা করব।’

শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি মশিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, অর্থ সম্পাদক রুহুল আমিন প্রমুখ।

সাম্প্রতিক সময়ে বনানীর ফারুক রুপায়ণ (এফআর) টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘এফআর টাওয়ারের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। সেখানে তিন শ্রেণীর মানুষ জড়িত। প্রথমে লোভী মালিক, লোভী ডেভলপার এবং ওই অঞ্চলে রাজউকের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।’

আরেকটা ছিল অপরাধের চিহ্ন পাওয়ার পরেও ব্যবস্থা না নেওয়া। ওই ভবন সম্পর্কে ২০০৭ সালে একটা রিপোর্ট এসেছিল যে এফআর টাওয়ারের উপরের অংশ অবৈধভাবে নির্মাণ হয়েছে। ওই রিপোর্টটি আসার পরেও তৎকালীন সময়ে যিনি রাজউকের চেয়ারম্যান ছিলেন বা যারা কর্মকর্তা ছিলেন তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এমনকি ফাইলে কোন নোটও দেননি, ওই রিপোর্টটা দেখার পরেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কেন তারা করেননি সেটাকে খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ে কমিটি করেছি। কোন মন্ত্রীর প্রভাব ছিল কিনা অথবা উপদেষ্টার প্রভাব ছিল কি না বা তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীরা জড়িত ছিল কিনা সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।

মন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, ‘নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে আমরা রাজউক থেকে ২৪টি টিম নামিয়েছি। প্রথমে বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শন করবে এরপর সকল ভবন পরিদর্শন করে দেখা হবে ব্লিডিং কোড অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা আছে কি না। আমরা ভবনগুলো ক্লাসিফাই করতে চাই।’

যদি কোন ভবনে শুধু অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে তাদের সময় বেধে দেব এই সময়ের মধ্যে বিল্ডিং কোডে যে ব্যবস্থা অনুমোদন করা হয়েছে সেই ব্যবস্থা সংযুক্ত করতে হবে। ভবন মালিক সেটা করার পর আবার পরিদর্শন টিম যাবে, তারা সার্ভে করার পর ব্যবহারের অনুমতি দেব।’

ইমারত নির্মাণের অনুমোদন ছাড়া যারা ঊর্ধ্বমুখী ভবন করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বুয়েটসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নিয়ে একটি টিম থাকবে। সেখানে তারা পরিদর্শন করে যদি দেখেন বহুতল ভবনটির অবৈধাংশ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথক পিলার দিয়ে শক্ত করা যায় তাহলে সেটা করার জন্য নির্দেশনা দেবে। আর যদি দেখা যায় ওই ভবনের সেই সক্ষমতা নেই তাহলে সেই ভবনের জন্য নির্দিষ্ট সময় দিয়ে ভেঙে ফেলতে হবে। অনুমোদনহীন ভবন বৈধতা দেবার সুযোগ নাই।’

প্রভাবশালীদের চাপে পিছু হটার পুরনো সংস্কৃতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘ভবনের মালিক যত প্রভাবশালীই হোক এটা মুখ্য না আইন সঙ্গতভাবে হয়েছে কি, হয় নাই সেটা দেখব। এখানে কারো রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। অপরাধ যে করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। সেখানে কে কোন দল করল সেটা দেখা হবে না।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিভিল অ্যাভিয়েশনের কাগজ জালিয়াতি করে একটি বহুতল ভবন করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম আলোর কাছেই আরেকটি মিডিয়া হাউজ সেখানে রয়েছে সেই ভবনটি সিভিল অ্যাভিয়েশনের কাগজ জালিয়াতি করে গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা দৃষ্টান্ত রাখতে চাই কেউ আইনের বাইরে না। আশাকরি আগামী সপ্তাহে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

এই মুহূর্তে রাজধানীতে ৯০ হাজার ভবন নির্মাণ কাজ চলমান বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এবার যে অথরাইজড অফিসারের এলাকায় অবৈধ ভবন নির্মাণ হচ্ছে বা হবে ওই এলাকার অফিসারকে দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। কোন ভবন ১০ তলা হয়ে যাবার পর বলবে অবৈধ সেটা হবে না। এরকম হলে ওই অফিসারকে অভিযুক্ত করা হবে।’

হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আদালত সময় বৃদ্ধি না করলে আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমরা ভবনে যারা ছিলেন তাদের সুনির্দিষ্ট সময় দেব।’

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে ৬ তলার ঊর্ধ্বে বহুতল আর রাজউকের ভাষ্যমতে ১০ তলা। তাহলে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যার যে দায়িত্ব সেটাই পালন করা উচিত। ফায়ার সার্ভিসের কাজ বহুতল ভবন চিহ্নিত করা না। তাদের কাজ অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা মোকাবেলা করা।’

কালের আলো/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email