ভাষা আন্দোলনে যেভাবে বাঙালিদের উদ্ধুদ্ধ করতেন কয়েস উদ্দিন

প্রকাশিতঃ 5:15 am | February 21, 2018

কালের আলো রিপোর্ট :
৯০ পেরিয়েছে তার বয়স। সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরে ঘুরে বেড়ান শহরের অলিগলি। সবার কাছেই তিনি পরিচিত। তিনি কয়েস উদ্দিন আহাম্মেদ। একজন ভাষা সৈনিক।

কয়েস উদ্দিন শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়-অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গান রচনা করেন। নিজেই তাতে সুরারোপ করেন এবং তা গেয়ে বেড়ান। শহরের যেখানেই প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সভা চলুক না কেন, তিনি প্রথম কাতারে বসেন। গানের আবদার করলে মঞ্চে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন।

কয়েস উদ্দিন আহাম্মেদ ছিলেন মওলানা ভাসানীর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে তার বিয়ে-থা করা হয়নি। তিনি এখনও অকৃতদার।

কয়েস উদ্দিনের কাছে ভাষা আন্দোলনের কথা জানতে চাইলে নস্টালজিক হয়ে পড়েন। কয়েস ভাই বলেন, তিনি ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী। তিনি প্রাণের টানে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন করেছেন। তিনি বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি সাংসারিক অনটনের কারণে। বাবা মরহুম ছইম উদ্দিন সরকার। বাড়ি শহরের বেলটিয়া এলাকায়।

কয়েস উদ্দিন বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে বিভেদ শুরু হয়। আমরা এই দ্বিজাতি তত্ত্ব চাইনি। মুসলিম লীগ একটি সাম্প্রদায়িক দল। আমরা ছিলাম সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী। তাই প্রাণের টানে হিন্দুদের সে সময় রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। ১৯৫২ সালে জিন্নাহ যখন ঢাকার কার্জন হলে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেন, তখনই শুরু হয় আমাদের ভাষা আন্দোলন।’

কয়েস উদ্দিনও যোগ দেন ভাষা আন্দোলনে। তিনি যাদের নেতৃত্বে জামালপুরে ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, তারা হলেন তৈয়ব আলী, তাছির মোক্তার, মোয়াজ্জেম উকিল, হায়দর আলী মল্লিক, নাসির সরকার প্রমুখ।

কয়েস ভাই ভাষা আন্দোলনের উপরে গান লিখে নিজেই গেয়ে বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করতেন। ২১ ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানিদের গুলিতে রফিক, বরকত, ছালাম শহীদ হলে সারাদেশে আন্দোলন বেগবান হয়। পরবর্তীতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানিরা মেনে নিতে বাধ্য হয়। কয়েস ভাই আইয়ুব খানের মার্শাল ল’-এর সময় এক বছর জেল খাটেন আইয়ুববিরোধী গান রচনা করার জন্য।

কালের আলো/এইচটি/আরএ

Print Friendly, PDF & Email