বাড়িতে বাবার মরদেহ রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে শরীফা আক্তার

প্রকাশিতঃ 5:53 am | February 16, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ট্রাকের ধাক্কায় চিরতরে হারিয়েছেন সংসারের একমাত্র অবলম্বন বাবাকে। বাড়িতে কান্নার রোল। বোবা কান্নার পাষাণ যন্ত্রণায় স্তব্ধ মেয়ে শরীফা আক্তার। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালেই আবার এসএসসি পরীক্ষা।

এ অবস্থায় বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়েছে তাকে। হতভাগা শরীফা আক্তার বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ময়মনসিংহ নগরীর মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌরনীতি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে বাবার মৃত্যু শোকে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিল এ পরীক্ষার্থী।

সদর উপজেলার লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমেনা বেগম চম্পা বিকেলে দৈনিক কালের আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা যায়, সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের সাহেব কাচারি এলাকায় বাসিন্দা শরীফা আক্তার স্থানীয় লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

তার বাবা বালু শ্রমিক আব্দুর রশিদ (৪০)। গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বালু বোঝাই করতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে তাঁর নামাজে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।

বাবা’র মৃত্যুতে শরীফাদের বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা থাকায় বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষা হলে যেতে হয়েছে তাকে।

স্থানীয় লেতু মন্ডল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমেনা বেগম চম্পা সকালেই শরীফার বাড়িতে ছুটে আসেন। এবং এ পরীক্ষার্থীকে খাইয়ে হল অবধি নিয়ে যান।

এ বিষয়ে শিক্ষক আমেনা বেগম চম্পা দৈনিক কালের আলোকে বলেন, পরীক্ষার হলে শরীফার কান্না দেখে অন্য পরীক্ষার্থীরাও অঝোরে কেঁদেছে। আমি মেয়েটিকে সাহস দিয়েছি। ওকে বলেছি, এ পরীক্ষা জীবনেরও কঠিন এক পরীক্ষা।

তিনি জানান, স্থানীয় মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রসচিব শামছুল আলম এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শরীফার পরীক্ষার খোঁজ খবর নেন এবং তাকে শান্তনা দেন।

স্থানীয় মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব শামছুল আলম দৈনিক কালের আলোকে জানান, এ ঘটনাটি অনেক মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। পুরো বিষয়টি আমাদেরও কাঁদিয়েছে।

বাবা’র মরদেহ বাড়িতে রেখে মেয়ের পরীক্ষা দেয়ার ঘটনা কী যে দু:সহ যন্ত্রণার ভারী বোঝা এটি কেবল যার জীবনে ঘটে সেই বুঝে। তাকে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ করতে আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করেছি।

কালের আলো/সিএ/এমএ

Print Friendly, PDF & Email