সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 4:28 pm | March 03, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক, এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যখনই প্রয়োজন তখনই সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে এটাই আমার বিশ্বাস। যেকোনও হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক।

রবিবার (৩ মার্চ) রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের (বিআইআরসি) ‘জাতীয় পতাকা প্রদান-২০১৯’অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী সেবাবাহিনীর উদ্দেশে বলেন, জনগণের সেবা করার জন্য সেনাবাহিনীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে এটা আমার বিশ্বাস।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। এই সুনাম অক্ষুণ্নের আপনারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। তিনি ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। তার সুদূর প্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সেনাবাহিনী আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাই আজ দেশ ও দেশের বাইরে সেনাবাহিনী এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদাতিক বাহিনীর গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘দি ইস্ট বেঙ্গল’ রেজিমেন্টের পাশাপাশি পদাতিক বাহিনীর রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আমরাই প্রথম অনুভব করি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, স্বাধীন বাংলাদেশ নামে আমাদের একটি রেজিমেন্ট থাকবে। তাই আমি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট গঠনের ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দেই। ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করি। ২০১১ সালে আমি এই রেজিমেন্টকে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পতাকা প্রদান করি।

‘এই রেজিমেন্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত একমাত্র রেজিমেন্ট। বর্তমানে এ রেজিমেন্টে দু’টি প্যারা কমান্ডোসহ মোট ৪৩টি ইউনিট রয়েছে। এ রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশ ও দেশের বাইরে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আপনারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

তিনি বলেন, পতাকা হলো জাতির স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ও সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা সব সৈনিকের কর্তব্য। জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। আজ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এর মান অর্জন করায় আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। কর্মদক্ষতা ও কঠোর অনুশীলন, কর্তব্য ও নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যেই পতাকা আজ আপনারা পেয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সর্বদা প্রস্তুত থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি জাতি গঠনমূলক কাজে সেনাবাহিনী নিজেদের উৎসর্গ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মাসেতুর কাজ নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের তদারকির কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে রাস্তাঘাট পুল-ব্রিজ নির্মাণ করে দিচ্ছে সেনাবাহিনী।

‘এছাড়া বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আত্মত্যাগ ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনছে। যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি আধুনিক ও চৌকস সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। এজন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সেনাবাহিনীতে তিনটি নতুন ডিভিশনের প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস ও মিসাইল রেজিমেন্ট।

অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, আর্টিলারি গান, মর্ডান ইনফ্যান্ট্রি গেজেট ইত্যাদি সংযোজন করে সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতাকে বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চিকিৎসাসেবা ও আবাসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। সেনা সদস্যদের রেশন স্কেল বাড়ানো হয়েছে। সদস্যদের দুস্থ ভাতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর জেসিও পদকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে এবং সার্জেন্ট পদকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নত করা হয়েছে। আরও অনেক কল্যাণমুখী কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি একজন নারী ডাক্তারকে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে নারী কর্মকর্তাদের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়া ও ইউনিট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী পাইলট সংযোজন করে নতুন দিগন্তের সূচনা করা হয়েছে। এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী অফিসার প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের সুনাম বয়ে এনেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারে প্রশিক্ষণ প্রশাসন আবাসনসহ একটি আধুনিক ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলতে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান ট্রেনিং অপারেশনের সুবিধা বাড়ানোর আরও কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি, সমুদ্রসীমা জয় করেছি, সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছি, জল, স্থলে ও আকাশসীমায় অবস্থান সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয়েছে।’

এসময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান এবং শাসক হিসেবে নয়, জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বজলার রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে রাজশাহী পৌঁছান। বেলা পৌনে ১২টায় তিনি রাজশাহী সেনানিবাসের শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন। পরে প্যারেড পরিদর্শন করেন।

এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক এক করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর’র ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান করেন।

কালের আলো/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email