পুলিশ সদস্যদের আইজিপি’র চূড়ান্ত বার্তা

প্রকাশিতঃ 5:30 pm | February 06, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আহ্বানের পর পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করতে নিজ বাহিনীর সদস্যদের চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছেন।

এমনকি এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারীর পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বুধবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ এর তৃতীয় দিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ৫১৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘আইজিপি এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিস ব্যাজ’ পরানো শেষে নিজের বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্পষ্ট ভাষায় আইজিপি বলেন, কোনো অবস্থাতেই নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারীর আওতায় রাখতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে হবে।

আরো পড়ুন:
পুলিশকে ‘সেবাধর্মী ও জনবান্ধব’ হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

মাদককে জাতীয় সমস্যা উল্লেখ করে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের সখ্যতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, মাদক বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। সামাজিকভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। আমরা মাদককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ২০১৮ সালে ১ লাখ ১২ হাজার মাদক মামলায় প্রায় দেড় লাখ গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য।

আইজিপি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের কোনো সখ্যতা থাকতে পারবে না। এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতার কথা জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। বর্তমানে দেশ অনেকাংশেই জঙ্গির আগ্রাসন থেকে মুক্ত।

এ সময় আইজিপি ব্যাজ ও পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, পুরস্কার নামমাত্র উপহার নয়। এটা আপনাদের দক্ষতার স্বীকৃতি। এবারই প্রথম আইজি ব্যাজ প্রাপ্তদের নগদ ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ২০১৮ সালে প্রশংসনীয় ও ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নির্বাচিত ৫১৪ জন পুলিশ সদস্যকে আইজিপি এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিস ব্যাজ পরিয়ে দেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

আরো পড়ুন:
‘নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়’

একই অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক দ্রব্য ও চোরাচালান মালামাল উদ্ধারে সাফল্য অর্জনকারী ইউনিটকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে ‘ক’ গ্রুপে চট্টগ্রাম জেলা প্রথম, সিএমপি, চট্টগ্রাম ২য় এবং কুমিল্লা জেলা তৃতীয় হয়েছে। ‘খ’ গ্রুপে কক্সবাজার জেলা ১ম, যশোর জেলা ২য় এবং নরসিংদী জেলা ৩য় হয়েছে। ‘গ’ গ্রুপে রাজবাড়ী জেলা প্রথম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দ্বিতীয় এবং গাজীপুর জেলা তৃতীয় হয়েছে।

‘ঘ’ গ্রুপে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম প্রথম, র‌্যাব-৮, বরিশাল দ্বিতীয় এবং র‌্যাব-৫, রাজশাহী তৃতীয় হয়েছে। ‘ঙ’ গ্রুপে ডিবি, ডিএমপি প্রথম, ডিএমপির গুলশান বিভাগ দ্বিতীয় এবং কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ডিএমপি তৃতীয় হয়েছে।

২০১৮ সালে মাদক দ্রব্য উদ্ধারে ‘ক’ গ্রুপে সিএমপি, চট্টগ্রাম প্রথম, কুমিল্লা জেলা দ্বিতীয় এবং চট্টগ্রাম জেলা তৃতীয় হয়েছে। ‘খ’ গ্রুপে কক্সবাজার জেলা প্রথম, নারায়ণগঞ্জ জেলা দ্বিতীয় এবং ফেনী জেলা তৃতীয় হয়েছে। ‘গ’ গ্রুপে লালমনিরহাট জেলা প্রথম, আরএমপি, রাজশাহী দ্বিতীয় এবং মাদারীপুর জেলা তৃতীয় হয়েছে।

‘ঘ’ গ্রুপে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম প্রথম, র‌্যাব-৫, রাজশাহী দ্বিতীয় এবং র‌্যাব-২, ঢাকা তৃতীয় হয়েছে। ‘ঙ’ গ্রুপে ডিবি, ডিএমপি, ঢাকা প্রথম, কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ডিএমপি, ঢাকা দ্বিতীয় এবং ওয়ারী বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকা তৃতীয় হয়েছে। ‘চ’ গ্রুপে হাইওয়ে পুলিশ প্রথম, রেলওয়ে পুলিশ দ্বিতীয় এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন তৃতীয় হয়েছে।

২০১৮ সালে চোরাচালান মালামাল উদ্ধারে ‘ক’ গ্রুপে সিএমপি, চট্টগ্রাম প্রথম, কুমিল্লা জেলা দ্বিতীয় এবং দিনাজপুর জেলা তৃতীয় হয়েছে। ‘খ’ গ্রুপে যশোর জেলা প্রথম, ফেনী জেলা দ্বিতীয় এবং বাগেরহাট জেলা তৃতীয় হয়েছে। ‘গ’ গ্রুপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রথম, জয়পুরহাট জেলা দ্বিতীয় এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা তৃতীয় হয়েছে।

‘ঘ’ গ্রুপে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম প্রথম, র‌্যাব-২, ঢাকা দ্বিতীয় এবং র‌্যাব-১১, নারায়ণগঞ্জ তৃতীয় হয়েছে। ‘ঙ’ গ্রুপে ডিএমপি, ঢাকার মিরপুর বিভাগ প্রথম, ডিএমপি, ঢাকার উত্তরা বিভাগ দ্বিতীয় এবং কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ডিএমপি তৃতীয় হয়েছে। ‘চ’ গ্রুপে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন প্রথম, হাইওয়ে পুলিশ দ্বিতীয় এবং রেলওয়ে পুলিশ তৃতীয় হয়েছে।

এর আগে একই দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক অনুষ্ঠানে সেবাপ্রত্যাশী মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশকে ‘সেবাধর্মী ও জনবান্ধব’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পুলিশদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের নিকট সেবা নিতে আসা কোনো মানুষই যেন হয়রানির শিকার না হয় এবং প্রয়োজনীয় আইনগত সেবা ও পরামর্শ পায় সেদিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করে আপনারা পুলিশকে একটি সেবাধর্মী ও জনবান্ধব সার্ভিসে পরিণত করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

সোমবার(৪ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশকে আরও জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ যাতে কোনোভাবে পুলিশ সদস্যদের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’

কালের আলো/এএ/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email