ভগ্নাংশ প্রেম প্রকাশ

প্রকাশিতঃ 1:35 pm | October 05, 2017

আমাদের কাব্যাঙ্গনে নানা কারণে একটা দুঃসময় যাচ্ছে। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভের একটা দুর্বার বাসনা লক্ষ্য করি। তাতে মন্দের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু কবিতা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক পরিচিতি তার স্কুলজীবনে ঘটে না। শিক্ষক কবিতা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন। পরীক্ষায়ও বলা হয় প্রসঙ্গসহ ব্যাখ্যা লিখ। কিন্তু এই ব্যাখ্যাটা যে আসলে কবিতা বিশেষের বিকৃতি, সেটা বোঝার সৌভাগ্য অনেকেরই হয় না। কবিতা যে বুদ্ধি দিয়ে বোঝার ব্যাপার না এ বোধ তার জন্মায় না। আসলে কবিতা যে নিজেই নিজের সর্বোত্তম প্রকাশ সেটা স্কুলের বাংলা শিক্ষায় কখনো বলা হয় না।

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, কবিতার যেটুকু বোঝা গেল সেটা তার দেহ, যেটা বোঝা গেল না সেটা তার প্রাণ।

কবিতা আসলে একটা অন্তরঙ্গ অনুভূতি, যা পাঠকের প্রাণে সঞ্চারিত হয়। সেটা বুদ্ধিজাত কিছু নয়। বুদ্ধি দিয়ে তাকে বিচার করা কবি ও কবিতা উভয়ের প্রতি অবিচার করা। কারণ কবিতার মূল বিষয় হচ্ছে প্রেরণা। সেটাকে কেউ কেউ ঐশ্বরিক বলে না মানলেও, সেটা যে পরাবাস্তব প্রেরণাজাত তা সম্ভবত সবাই স্বীকার করবেন। অন্ত্যমিল দিয়ে কিছু লিখলেই সেটা কবিতা হয় না। তাকে বলা যাবে পদ্য। কিছু পদ্য কবিতা হতে পারে, কিন্তু সব পদ্য কবিতা নয়। আবার অনেক গদ্যও কবিতা হতে পারে।

তাহলে কবিতা আসলে কী? কবিতার সংজ্ঞা যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা দিয়ে গেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও একথা বলা যায় না যে, সবাই যে কোনো একটি সংজ্ঞা সম্পর্কে একমত হয়েছেন। আমার কাছে যে সংজ্ঞাটি সবচেয়ে সহজ ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে সেটা ড. জনসনের। তিনি বলেছেন, যদি প্রশ্ন করো কবিতা কী? তাহলে বলব আমি জানি না। তবে যদি প্রশ্ন না করো তাহলে বলব আমি জানি।

যা হোক, কবিতার মাধ্যম হচ্ছে শব্দ। শব্দের মাধ্যমে কবি তার অনুভূতিকে পরিবেশন করেন। সে শব্দে আছে চিত্রকল্প, সংগীত বা ধ্বনিমাধুর্য বা ছন্দ, যাকে এক অর্থে আঙ্গিক বলা যায়। তরুণদের অনেকেই এ সম্পর্কে না জেনেই কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং যেহেতু অর্থের অভাব নেই, সেগুলো বইমেলায় আসে প্রচুর পরিমাণে। আমাদের সংগীতের জগতেও একই দুর্ভাগ্য। রাগ-রাগিণী সম্পর্কে তালিম না নিয়ে বা যথেষ্ট রেওয়াজ না করে সরাসরি টেলিভিশন-রেডিওতে গান করা। এরপর আছে প্রবীণ কবিদের নিজ নিজ প্রভাব বলয় সৃষ্টির প্রয়াস এবং তরুণদের সে বলয়ে প্রবেশের চেষ্টা। সাহিত্যে রাজনীতির অনুপ্রবেশও আমাদের কাব্যানুভূতির সীমানাকে করেছে সংকীর্ণ।

কবি সালেহ মুজাহিদের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ভণিতা একটু দীর্ঘই হয়ে গেল। তবে কবি যে প্রেক্ষাপটে কবিতা লিখছেন সে সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা দেয়াটা সমীচীন মনে হলো। সালেহ মুজাহিদ কবি, শুধুই কবি। তিনি কোনো গোষ্ঠীতে অবস্থান নেননি। কবিতা সম্পর্কে তার অনুভূতিও স্বচ্ছ। কবিতায় তার নিজস্ব একটা জগৎ আছে, নিজস্ব কিছু ভাবনাও আছে। কিন্তু সে ভাবনা কখনো কবিতার নান্দনিক অনুভূতিকে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠেনি। বইটিকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগটি তার নিজস্ব চিন্তার জগতের বিস্তার ও বিচরণ। দ্বিতীয় ভাগটিতে তিনি তাঁর সাম্প্রতিক চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতাপ্রসূত লেখা কিছু কবিতা, যা তিনি লিখেছেন প্রাচীন চৈনিক কবিদের আঙ্গিকের আদলে, তার মধ্যে কিছু চীনা কবিতার অনুবাদও আছে

Print Friendly, PDF & Email