ময়মনসিংহে বাঁধাকপি চাষিদের মাথায় হাত

প্রকাশিতঃ 11:07 pm | January 20, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রায় ১৮ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন কৃষক শফিকুল ইসলাম (৪৫)। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় হাসি নেই তার মুখে।

কাঁচি হাতে বাঁধাকপির ক্ষেতে কর্মব্যস্ত শফিকুলের অদূরেই দাঁড়ানো স্ত্রী শেফালী খাতুন (৪০) ও মেয়ে রোজিনা আক্তারেরও (১৪) ভারমুখ।

গতবছর একই ক্ষেত থেকে দ্বিগুণ লাভ করলেও এবার মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভবান হচ্ছেন। নিজেদের পরিশ্রমে ফলানো সবজি থেকে মার খাচ্ছেন তারা।

শফিকুল ক্ষেত থেকে পাইকারদের কাছে ৮ টাকা পিস বিকোলেও এই বাঁধাকপিই শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ টাকায়। কোনোমতে উৎপাদন খরচ ওঠলেও লাভ করতে না পারায় বাঁধাকপি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।

ফসলের মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের এই চিত্রটি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার উজান ঘাগড়া এলাকার।

ওই এলাকার মাঠে মাঠে সবুজ বাঁধাকপির ছড়াছড়ি। চোখ ধাঁধানো এই সবুজে কৃষকের মুখে হাসির রেখা থাকার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছর ময়মনসিংহে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের সবজি আবাদ হয়েছে। বাজারে নতুন সবজি ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ভালো দাম পেয়েছে কৃষকরা।

কৃষক শফিকুলের স্ত্রী শেফালী খাতুন জানান, এবার কোনোমতে উৎপাদন খরচ ওঠেছে। কিন্তু এই দামে খুশি হওয়ার সুযোগ নেই। কৃষকের জায়গায় লাভবান হচ্ছেন পাইকারি বিক্রেতারা।

একই রকম কথা জানিয়ে কৃষক শফিকুল জানান, মাঠে বাঁধাকপি সরাসরি বাজারে নিলেও পাইকারি বিক্রেতাদের জন্য বিক্রি করা যায় না। সেখানেও তাদের মাধ্যমেই দরদাম নির্ধারণ করতে হয়। আসলে যে দাম কৃষক স্বপ্নেও ভাবে না যখন বাজারে সেই চড়া দামে নিজের ফলানো সবজি বিক্রি হয় তখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এই গ্রামের শুধু শফিকুলই নয় আরো অনেক কৃষক অধিকহারে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। চরাঞ্চলের পর এই গ্রামের বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজির সুনাম রয়েছে।

শফিকুলের ক্ষেতের ঠিক সামনেই ১৫ শতাংশ জমিতে মফিজ উদ্দিন (৪০) এবং ৪৮ শতাংশ জমিতে আজিজুর রহমান (৫০) বাঁধাকপি ফলিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা ছিলো, খরচ বাদে কমপক্ষে ২০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা আয় হবে। হাসির ঝিলিক থাকবে তাদের মুখে। কিন্তু শফিকুলের মতো মাথায় হাত পড়েছে মফিজ, আজিজুরদের।

আজিজুর রহমান জানান, সার, পানিসহ বাঁধাকপি আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো। এই থেকে খরচ বাদ দিয়ে আয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন ৩০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু এখন কেবলমাত্র উৎপাদন খরচই ওঠছে। একই রকম তথ্য জানান ১৩ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপি চাষ করা খোরশেদ আলী (৫০)।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কৃষকরা যে বাঁধাকপি মাঠে বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৮ টাকায়। সেই কপিই বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় তিনগুণ বেশি দামে। উৎপাদনকারী কৃষকরা লাভবান হতে না পেরে বাঁধাকপি চাষেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাদের ভাগ্যের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এজন্য সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার গড়ে তোলারও দাবি জানান।

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল মাজেদ জানান, কৃষক সাধারণত মূল বাজারে সবজি নিয়ে আসতে পারে না। আমাদের বাজার ব্যবস্থাই এমন। সেক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা কিছুটা লাভবান হয়ে থাকে।

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email