একটি স্কুটি, তিনটি মানুষের বেঁচে থাকার গল্প

প্রকাশিতঃ 5:46 pm | January 16, 2019

:: হাফিজুর রহমান::

ছেলেটির সাথে অল্প দিনের পরিচয়। মেয়েটি নিজের ভাগ্য নিজেই গড়তে পরিশ্রম করেন সারাদিন। তার দুই মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে একমাত্র অবলম্বন একটি স্কুটি। নিয়মিত একটি রাইডের খোঁজ আছে সেই ছেলেটির কাছে। স্বামী পরিত্যাক্ত মহিলার আয়ের একমাত্র উৎস ওই স্কুটি, চালাতেন উবারে। স্কুটিটি নিয়মিত ভাড়া হলে সংসারের অভাব থাকবে না। বাবার আদর থেকে বঞ্চিত মেয়ে দুটি পাবে তিনবেলা তিন মুঠো খাবারের সংস্থান। এমন ভাবনা থেকেই ছেলেটিকে দিয়েছিল মোবাইল নম্বর। এরপর কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। উবারের স্কুটি ভাড়া নেয়া মহিলার সংখ্যা এখনও ঢাকা শহরে হাতেগোনা, তাইতো ছেলেটির দেয়া আশ্বাসে স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন শাহানাজ।

এবার ছেলেটি শাহনাজকে জানায় কথা বলতে হবে মূল ভাড়া নেয়া মহিলার সাথে। যেতে হবে তার অফিসে। ফার্মগেইট এলাকার খামার বাড়ি থেকে ছেলেটি ওঠে শাহনাজের স্কুটিতে। চলে যায় এয়ারপোর্টে, সেখান থেকে মিরপুর, তালতলা ঘুরে আবার আসে মানিক মিয়া এভিনিউতে। এর মধ্যে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছে শাহনাজকে। জানিয়েছে তার নাম জনি। প্রতিদিন যে বিশাল আয় হবে তারও একটা হিসেব দিয়েছে শাহনাজকে। কিন্তু এই মিষ্টি কথার ছলে যে কঠিন প্রতারণা অপেক্ষা করছে, তা জানা ছিল না শাহানাজের। ঘটনা গতকাল ১৫ জানুয়ারির। দুপুরের দিকে মানিক মিয়া এভিনিউতে এসে জনি স্কুটির ইঞ্জিন এবং গতি পরীক্ষা করতে অনুমতি চায় শাহনাজের নিকট। সরল-সহজ শাহানাজ তার স্কুটিটি চালানোর জন্য দিয়ে দেয় তাকে। এর পরের গল্প অন্যরকম। জনি স্কুটিটি নিয়ে আর ফেরত আসেনি।

মুহুর্তেই ঘটনার খবর ছড়িয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে। শের-এ-বাংলা নগর থানা পুলিশ ও তেজগাঁও জোনের চৌকষ পুলিশ অফিসারেরা দ্রুত স্কুটিটি উদ্ধারে তৎপর হয়। একমাত্র আয়ের অবলম্বন হারিয়ে অসহায় শাহানাজ সিদ্ধান্ত নেয় স্কুটিটি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তার হেলমেট মাথা থেকে খুলবেন না। কয়েকটি সংগঠনও এগিয়ে আসে শাহানাজের চোখের জল থামাতে। কেউ নতুন স্কুটি কিনে দিতেও হাত বাড়ায় তার দিকে। তবে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পুলিশ নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রঘুনাথপুর এলাকা থেকে প্রতারক জুবাইদুল ইসলামকে আটক সহ উদ্ধার করেন স্কুটিটি। তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিল্পব সরকার স্কুটিটি সাহানাজকে ফেরত দিয়েছেন এবং সাথে তার সন্তানদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছেন নগদ দশ হাজার টাকা। স্বল্প সময়ে এমন অকল্পনীয় সাফল্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সংবাদ মাধ্যমে পুলিশকে বাহবা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন সব অসহায় শাহনাজদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের এ অনন্য সেবা আগেও ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email