কথা রাখলেন সেনাবাহিনী প্রধান

প্রকাশিতঃ 4:35 pm | January 04, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

তিনি কথা দিলে কথা রাখেন। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে বার বার এটি প্রমাণ করেছেন। আবার দায়িত্ব পালনে তিনি সব সময় ‘টিম স্পিরিট’কেই গুরুত্ব দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব উদ্বেগ-উৎকন্ঠার চাদর সরিয়ে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

নির্বাচনের আগের দিন শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন। আমরা আশেপাশেই থাকবো। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো, কেউ যেন কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে।’

দেশের স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারা দেশে নির্বাচনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৫০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন থাকায় কোন রকম ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন সাধারণ ভোটাররা।

নির্বাচনের আগের দিন যে কথা দিয়েছিলেন দেশকে, দেশের সাধারণ মানুষকে সেই কথাই অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছেন দেশপ্রেমিক এই বাহিনীর প্রধান। নিজের পুরনো সেই কথাই নিজেই মনে করিয়ে দিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (০৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প এলাকায় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তিনি বললেন, ‘আমি সেদিন যে অঙ্গীকারটা করেছিলাম আপনাদেরকে নিরাপত্তা দিবো। আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যান। আপনাদের আশেপাশে আমরা থাকবো। আমরা সেই কথা রেখেছি।’

যেই কাজটা পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের করা প্রয়োজন, সেটা সেনাবাহিনীকে দিয়ে সম্ভব নয় জানিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কাজ ছিলো নির্দিষ্ট। আমরা পর্যাপ্ত টহল রেখেছিলাম। এই টহল থাকার কারণে নিরাপদে ভোট দিতে ভোটাররা আশ্বস্ত হয়েছিলেন।

সেনাবাহিনী যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তাতে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আরো বাড়বে। সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজ নির্বাচনের দিন হয়নি। সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় মানুষ আশ্বস্ত হয়ে ভোট দিয়েছে।’

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ভয়াবহতা পেরিয়ে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর নাম ও পোশাক বদলে যাওয়ার পর ২০১২ সালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দায়িত্ব নিয়েছিলেন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। শুরুতে এই বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন।

পরে নিজের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও দেশের প্রতি কমিটমেন্ট থেকে বিজিবিকে পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে একটি আধুনিক ও গতিশীল বাহিনীতে রূপ দেওয়ার বিরল কৃতিত্ব দেখান তিনি। নিজের কৃতিত্বপূর্ণ এমন সাফল্যে ঠাঁই করে নেন ইতিহাসেও। একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও ওই সময় সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর।

আর এই বিষয়টিই সবার সামনে উপস্থাপন করেন বিদায়ী সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল শফিউল হক। বিদায়ী বছরের শেষের দিকে তিনি জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি’র দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ওইদিন আবু বেলাল শফিউল হক কর্মক্ষেত্রে জেনারেল আজিজ আহমেদের দক্ষতা ও যোগ্যতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘অলিম্পিকের দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করবেন জেনারেল আজিজ। তাঁর সময়ে বিজিবি অনেকগুলো মেডেল পেয়েছে। খেলাধূলায় অনেক উন্নতি লাভ করেছে। তিনি বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ক্রীড়া সংগঠনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বাইরেও তাঁর অগাধ অভিজ্ঞতা রয়েছে। জেনারেল আজিজের নেতৃত্বে অলিম্পিক মুভমেন্ট আরো অনেক এগিয়ে যাবে।’

কালের আলো/ওএইচএ/এই

Print Friendly, PDF & Email