গৃহবধু ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার তিন

প্রকাশিতঃ 7:28 pm | January 02, 2019

কালের আলো, নোয়াখালী:

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) মারধর ও গণধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু (৪০) নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত মো. সোহেল (৩৭) ও স্বপনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে চরজব্বার থানা পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের রাতে (৩০ ডিসেম্বর) ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় ধর্ষণের ঘটনায় একটি মামলা দয়ের করা হয়েছে। মামলাটিতে আসামি হিসেবে মো. সোহেল (৩৫), মো. হানিফ ৩০), মো. স্বপন (৩৫), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বেচু (২৫), বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশারফ (৩৫) ও ছালা উদ্দিনের (৩৫) নাম রয়েছে। এদের মধ্যে বাদশা, সোহেল ও স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, গতকাল বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ গ্রেপ্তার করা হয়েছে সোহেল ও স্বপনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তারা কিছুই স্বীকার করেননি।

ঘটনার তদন্তে আজ নোয়াখালীতে গেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পৃথক দুটি দল। নির্যাতনের শিকার ওই নারী বর্তমানে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালেই ওই নারী, তার স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত দলের সদস্যরা।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাষবিক নির্যাতনের কারণে ওই নারীর পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। তিনি পাশ ফিরে শুতে পারেন না। সারা শরীরে নির্যাতনের জায়গাগুলোতে রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. খলিল উল্যাহ জানান, গতকাল মঙ্গলবার থানা থেকে অনুরোধপত্র পাঠানোর পর তারা আলামত সংগ্রহ করেছেন। তবে পরীক্ষার ফলাফল এখনো তার হাতে এসে পৌঁছায়নি।

গত সোমবার দিবাগত ভোররাত ৪টার দিকে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক গৃহবধূ (৩৫) গণধর্ষণের শিকার হোন। ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের নেতৃত্বে এই কাজ করা হয়েছে বলে জানান ওই নারী। তিনি বলেন,‘তারা আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেছিল, কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিয়েছি।’

এ ঘটনায় গণধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী সোমবার রাতে বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে চর জব্বার থানায় মামলা করেন। তবে অভিযুক্ত রুহুল আমিনকে এই মামলার আসামি করা হয়নি। এমনকি মামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনায় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়া নিয়ে ঝামেলার বিষয়টিও বাদ পড়ে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বাদী যা যা বর্ণনা করেছেন, তাই উল্লেখ করা হয়েছে। এখন যদি তিনি কোনো কিছু বাদ গেছে বলে দাবি করেন, তারা তদন্তে সেটিও খতিয়ে দেখবেন।’

এর আগে তবে ধর্ষণের অভিযোগটি নিশ্চিত করলেও এটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঘটনা নয় বলে দাবি করেন নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) ইলিয়াস শরীফ। তবে অভিযুক্ত ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় জড়িত কেউ পার পাবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এর সঙ্গে যারাই জড়িত হোক, কেউই পার পাবে না। আমি এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব আমি জানি। অলরেডি পুলিশ, পুলিশের আইজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’

এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

কালের আলো/এএ/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email