নির্বাচন নিয়ে ইসির যত আয়োজন

প্রকাশিতঃ 10:38 am | December 29, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটাররা বিরতিহীনভাবে ভোট দেবেন। এরপরই প্রকাশ হবে ফলাফল। এতেই নির্ধারণ হবে কোন দল সরকার গঠন করবে

আর এই নির্বাচন আয়োজনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে নির্বাচনী সকল মালামাল মাঠপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে মাঠে রয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবন চত্বরে ফলাফল ঘোষণার স্থান পরিদর্শনে এসে শুক্রবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন- নির্বাচন নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। ভোট উৎসবমুখর হবে।

তিনি বলেন, ব্যাপক সংখ্যক ও সর্বাধিক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা। আমরা প্রস্তুত, ভোটররা সবাই উৎসবমুখর এবং আনন্দঘন পরিবেশে ভোটে অংশগ্রহণ করবে।

ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়ার বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণা হবে। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্টদেও উপস্থিতিতে কেন্দ্রেই ভোট গণনা করবেন। এ সময় সহকারী রিটার্নিং, প্রার্থীর এজেন্টেরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। ভোট গ্রণনা শেষে প্রিজাইডিং অফিসার লিখিত ফলাফল সংশ্লিষ্টদের সরবাহর করবেন। পরে এ ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। রিটার্নিং অফিসাররা তা ইসিতে পাঠাবেন। ইসির ফোয়ারা প্রাঙ্গণে স্থাপিত মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে। এ চত্ত্বরে ইসি দশটি মনিটরের মাধ্যমে ফলাফল প্রদর্শন করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিল হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইভিএমের ভোট কেন্দ্রে স্মার্টকার্ড বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিয়ে গেলে ভোট দান সহজ হবে।

পোলিং অফিসাররা সকাল আটটার আগেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নিয়োগপত্র দেখাবেন। এসব বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ইসি ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান সচিব।

যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

শনিবার মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ভোটের দিন দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত বেবি টেক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নৌযান চলচলের উপরও।

এছাড়া ভোটকে সামনে রেখে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত মোট চার দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষিদ্ধেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞার সময় রিটার্রিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির কাজে নিয়োজিত যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

এছাড়া মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালু্দ্দীন আহমদ।

হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথমে ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর এ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করেন। এ হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ২ ডিসেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর।

সচিব বলেন, ৩০ তারিখে ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মধ্যে মৃত্যুজনিত কারণে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে স্থগিত হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬জন দায়িত্বপালন করছেন। এরমধ্যে দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।

সচিব আরো জানান, ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রের ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি ভোটকক্ষে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২জন।

এবার ইসির নিবন্ধনে থাকা ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবগুলো দলই অংশগ্রহণ করছে। ৩০ তারিখে অনুষ্ঠিত ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬১জন। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৩জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৮জন প্রার্থী।

ভোটকেন্দ এবং নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রের নিয়োজিত ফোর্স সংখ্যা- প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার।

সেনা বাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০জন) ৩৮৯টি উপলায় ৪১৪ প্লাটুন, নৌবাহিনী ১৮টি উপলায় ৪৮ প্লাটুন, কোস্টগার্ড (প্রতি প্লাটুনে ৩০জন) ১২টি উপজেলায় ৪২ প্লাটুন, বিজিবি (প্রতি প্লাটুনে ৩০জন) ৯৮৩ প্লাটুন, র‌্যাব (প্রতি প্লাটুনে ৩০জন) প্রায় ৬০০ প্লাটুন ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।

এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র‌্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার), তাছাড়া সারাদেশে জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল দল নিয়োজিত আছে।

ভোটের দায়িত্বে ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনী কর্মকর্তা

১ হাজার ৩২৮ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২জন, অবশিষ্ট ৬৭৬জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সাথে নিয়োজিত রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬৪০জন, ১২২টি ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে ২৪৪জন, প্রিজাইডিং অফিসার ৪০ হাজার ১৮৩জন, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪জন।

দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক

দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০, ফেম্বোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েলথ হতে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক/বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন।

ইভিএমের মাধ্যমে ৬ আসন

ঢাকা-৬: প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ৮জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩১৫জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৭জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৮জন। ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ৯৮টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৬৩৮টি।

ঢাকা-১৩: প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ১০জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৫জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ১৬৮জন। ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ১৩৪টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭০টি।

রংপুর-৩: প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ৯জন। মোট ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭১জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২১ হাজার ১০৯জন। মহিলা ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৫৬২জন। ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ১৭৫টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৩টি।

খুলনা-২: প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ৭জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ১১৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৫জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭১জন। ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ১৫৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭২০টি।

সাতক্ষীরা-২: প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ৬জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৮জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৮জন। ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ১৩৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭৪টি।

চট্টগ্রাম-৯: প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ৮জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৩১জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪ হাজার ২০৬জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ২২৫জন। ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ১৪০টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯২০টি।

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদে বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে একক প্রার্থী থাকায় দেশের অর্ধেক মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাননি। এবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধনে থাকা সব দল অংশগ্রহণ করছে এবং ৩০০ আসনের প্রত্যেকটিতে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। যার ফলে দেশের সব মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

কালের আলো/এএ/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email