সিইসির পদত্যাগ দাবি ঐক্যফ্রন্টের

প্রকাশিতঃ 8:42 pm | December 25, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছ থেকে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনতো নয়ই, নিরপেক্ষ আচরণও আশা করা যায় না’ বলে অভিযোগ তুলেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার দিন আগে নতুন সিইসি নিয়োগ দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানিয়েছে তারা।

মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঐক্যফ্রন্টের জরুরি বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানান জোটের নেতারা।

বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছ থেকে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনতো নয়ই, নিরপেক্ষ আচরণও আশা করা যায় না’ বলে অভিযোগ তুলেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার দিন আগে নতুন সিইসি চাইলো জোটটি।

সন্ধ্যা ৬টার পর বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ২০ দলের প্রধান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা কোনো নির্বাচন হচ্ছে না, রক্তের হলি খেলা হচ্ছে। সব জায়গায় আনাদের প্রার্থিদের হামলা করা হচ্ছে। মহিলারাও বাদ যাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে দেখিয়ে বলেন, এটি হলো ২০১৮ সালের নির্বাচন। রক্তাক্ত সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গণফোরামের সুব্রত চৌধুরীও আক্রান্ত হয়েছে। কাউকে বাদ দিচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো নির্বাচন নয়।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ ও অকার্যকর। এটা আজ জাতির সামনে প্রমান হয়েছে। আমরা এ মুহুর্তে সিইসির পদত্যাগ চাই। এখনই চাই, তিনি পদত্যাগ করুন। এরপর ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতি পড়েন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। লিখিত বক্তব্য বলা হয়, সারাদেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর হামলা মামলা, নির্যাতনের বিষয়ে অবহিত করতে নির্বাচন কমিশনে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরোর নেতৃত্বে সিনিয়র নেতারা গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের অভিযোগ শুনে সিইসি নুরুল হুদা সরকার দলীয় নেতার মত আচরণ করেছে।

এতে আরে বলা হয়, সিইসির ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সাথে যে আচরণ করেছেনন, তা ছিলো অত্যন্ত অশোভন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা তাৎক্ষিনক বৈঠক বর্জন করেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবী করছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান করছি, যাতে একজন নিরপেক্ষ সিইসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কারণ এমন মেরুদণ্ডহীন কমিশনের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে আহ্বান জানাবো জনগণের ঐক্য গঠে তুলে জনগণের দাবী আদায় করার।

পরে আজ প্রচারণার সময় হামলার শিকার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচন কমিশনের আচারণ দেখে মনে হচ্ছে, ইসি ৭১ সালের আল বদর, আল শামস বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের বিজয়ী করতে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জনগণ যেভাবে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করেছে, ঠিক একইভাবে আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করবে।

উল্লেখ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। বিরোধীপক্ষের অভিযোগ প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের মাঠেই নামতে দিচ্ছে না পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে এসব বিষয় তুলে ধরে ঐক্যফ্রন্ট জরুরিভিত্তিতে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর দাবি জানায়। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন পুলিশ নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে সিইসির সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

সরকারি একটি বাহিনী সম্পর্কে সরাসরি নেতিবাচক মন্তব্য না করতে বলার জেরে বৈঠকেই বাহাস শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী আলোচনার পর সিইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বেও অভিযোগ তুলে বৈঠক বর্জন করে বেরিয়ে আসেন ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, ডা. জাফরুল্লাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ ফ্রন্টের নেতারা। ক্ষুব্ধ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ভবন থেকে নেমে দ্রুত নির্বাচন কমিশন থেকে চলে যান। পরে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অপর নেতারা।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সিইসি আমাদের কোনো কথাই শোনেন নি। আমরা সারাদেশে পুলিশের হাতে ধরপাকড়, হয়রানির বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছি, তিনি তা শোনেননি। তিনি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেছেন। তিনি জানান, ড. কামাল হোসেন ‘পুলিশ লাঠিয়াল বাহিনীর মতো আচরণ করছে’ এমন মন্তব্য করলে তার প্রতিবাদ করেন সিইসি। তিনি ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারের একটি বাহিনীকে নিয়ে তিনি এমন কথা বলতে পারেন না। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই পরে সবাই বৈঠক থেকে বের হয়ে আসেন।

ইসি ও সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে মির্জা আব্বাস, মঈন খান আফরোজা আব্বাস, মওদুদ আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপি নেতা কর্মীদের উপর পুলিশের হামলার কথা বললেই সিইসি ক্ষেপে যান। তিনি জানান, বিএনপি কর্মীদের গ্রেফতার, আক্রমন, আহত ও হত্যা করা হচ্ছে। সারাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সরকার ও কমিশন মিলে নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচনের ৩ দিন আগে গ্রেফতার, অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ না হলে ভোটাররা কিভাবে ভোট দেবে এমন প্রশ্ন তোলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। এখন জনগণ সিদ্ধান্ত নেবেন তারা কি করবেন?

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, সেনাবাহিনী ইসির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের ক্যাম্পে রেখে পুলিশ দিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের উপর নৃশংসতা চালাচ্ছে। এতে সেনাবাহিনীকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। নির্বাচনের মাঠের পরিবেশ ভয়ংকর খারাপ। এই অবস্থায় নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে সেনাবাহিনী মাঠে নামানোর দাবি জানায় ঐক্যফ্রন্ট। গত রোববার মাঠে নামে সেনাবাহিনী। এরপরেও কেনো নির্বাচনের মাঠের পরিবেশ নিয়ে এতো অভিযোগ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। তাদের ক্যাম্পে রাখা হচ্ছে। ক্যাম্পে রেখে, নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করলে, সেনাবাহিনীর সুনাম নষ্ট হবে।

ঐক্যফ্রন্টের অপর নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, বৈঠককালে নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ড. কামাল হোসেন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। তিনি বলেন, পুলিশ লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এই কথার প্রেক্ষিতে সিইসি ক্ষেপে যান। সিইসি পুলিশের পক্ষ হয়ে কথা বলেছেন, এটা হতে পারে না। সিইসির আচরণ ভদ্রোচিত ছিলনা। আমরা তার পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে সভা বর্জন করে চলে আসছি। সুষ্ঠু নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভূমিকার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের যাতায়াতে বাধা দেয়া থেকে প্রমাণ মিলে কী নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

কালের আলো/এএ/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email