ঐক্যফ্রন্টকে বিএনপি ১০০ আসনে ছাড় দেবে: সুব্রত

প্রকাশিতঃ 8:21 pm | December 03, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অনড় অবস্থানে নেই বলে জানিয়েছেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

সোমবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এ কথা বলেন।

এর আগে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

বৈঠক শেষে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আসন বণ্টন নিয়ে অনড় অবস্থানে নেই। যোগ্য প্রার্থী পেলে প্রয়োজনে বিএনপি ১০০ আসনে ছাড় দেবে।

মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের মধ্য দিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচনের নীলনকশার পরিকল্পনা করছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি ও ইশতেহার চূড়ান্ত করতেই মূলত বৈঠক করেন জাতীয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত করতে পারেননি তারা। এ নিয়ে আরও বৈঠক করবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। তবে আগামী ৮ ডিসেম্বরের পর ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এদিকে বিকাল ৩ টায় গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল অফিসে যান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। সেখানে তিনি প্রায় ১ ঘণ্টা অবস্থান করেন। তবে তাদের মধ্যে কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে- তা জানা যায়নি। পরে ‘ছাত্র অধিকার আন্দোলন’ কোটা আন্দোলনের নেতারা ড. কামাল হোসেনের অফিসে যান। সেখানে তারা ড. কামালকে অনুরোধ করেন ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে তাদের দাবি-দাওয়া সম্পৃক্ত করতে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো ২৪০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ১০০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে গণফোরাম। জেএসডি জমা দিয়েছে ৬০ আসনে। নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জমা দিয়েছে ৪০টি করে আসনে।

৪০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিএনপির কাছ থেকে সম্মানজনক আসন পেতে দরকষাকষি করছে ঐক্যফ্রন্টের শরিক চার দল। ফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্য ৯টি আসনে ধানের শীষ নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে এ দলটিকে সর্বোচ্চ দুটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে।

ওই দুটি আসন হচ্ছে-মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২ আসন আর এসএম আকরামকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সারা দেশে দলীয়ভাবে ৪০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কাদের সিদ্দিকীর দলকে দুটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে।

কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তার মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকীকে টাঙ্গাইল-৪ কিংবা টাঙ্গাইল-৮ আসনে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তার দলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকীকে গাজীপুর-৩ আসনটি দেয়া হতে পারে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, দলীয়ভাবে আমরা ৪০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তবে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির সঙ্গে যেসব আসনে সমঝোতা হবে, সেগুলো রেখে বাকি প্রত্যাহার করা হবে। ফ্রন্টের আরেক শরিক জেএসডি দলীয়ভাবে ৬০টি মনোনয়পত্র জমা দিয়েছে। তবে তাদের সর্বোচ্চ দুটি বা তিনটি আসনে ধানের শীষ দেয়া হতে পারে।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষীপুর-৪ আসনে আর তানিয়া রবকে ঢাকার একটি আসন দেয়া হতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে কুমিল্লা-৪ আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, ফ্রন্টের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বাকি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে।

গণফোরামের পক্ষ থেকে সারা দেশে শতাধিক আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ২০ আসনে ছাড় দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

আসন বণ্টন নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ২০-দলীয় জোটের শরিক ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এ নিয়ে কোনো সংকট হবে না।

তিনি আরও বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করা হয়নি। আশা করি প্রত্যাহারের আগে এ ব্যাপারে আমরা একটা সমঝোতায় আসতে পারব।

কালের আলো/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email