কলকাতার মেয়র ফরিদপুরের ববি হাকিম

প্রকাশিতঃ 5:22 pm | November 23, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

কলকাতার নতুন মেয়র হিসাবে ফিরহাদ হাকিমের নাম ঘোষণা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ববি হাকিম নামে পরিচিত এই নেতা আগে থেকেই রাজ্যের নগরোন্নয়ন এবং পৌর দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। আর কলকাতার নতুন এই মেয়রের আদি বাড়ি আমাদের ফরিদপুরে।

নারী ঘটিত কেলেঙ্কারির কারণে শোভন চ্যাটার্জী মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেবার পর বৃহস্পতিবার রাতে নতুন মেয়রের নাম ঘোষনা করেন মমতা।

নতুন মেয়র বেছে নেয়ার জন্য দলীয় কাউন্সিলরদের বৈঠক আগেই ডাকা হয়েছিল, যেখানে মমতা বন্দোপাধ্যায় ছাড়াও হাজির ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই বৈঠকেই নতুন মেয়রের নাম জানান মমতা।

ভারত স্বাধীন হবার পর ববি হাকিম হলেন কলকাতান প্রথম মেয়র। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার আগে এ শহরের পাঁচজন মেয়র ছিলেন মুসলিম, যাদের অন্যতম ছিলেন শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক। শেরে বাংলার পর ফিরহাদ হলেন প্রথম কোনও মুসলিম ধর্মাবলম্বী নেতা যিনি কলকাতার মেয়র পদে বসলেন।

ববি হাকিম দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অঞ্চলের মানুষ। কংগ্রেস রাজনীতি করতে করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। এরপর নব্বই দশকের শেষ দিকে কলকাতা কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসাবে প্রথম ভোটে জেতেন।

যতদিন গেছে, ততই মমতার ঘনিষ্ঠদের বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি পাড়ার বাসিন্দা ববি হাকিম।

কর্পোরেশনের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছিয়ে গেছেন বিধানসভায়। ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ার পরে হয়েছেন মন্ত্রী।

আর রাজনীতির ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ম্যান ফ্রাইডে’দের অন্যতম।

পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, তার দাদা বিহারের গয়া জেলা থেকে কলকাতায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। বাবা ছিলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের আইন কর্মকর্তা। আর মা ছিলেন কলকাতার একটি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা।

ফিরহাদ হাকিমের মায়ের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। তার মা হিন্দু মুখার্জী পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে জানিয়েছেন হাকিমের বাল্য বন্ধু ঋষিকেশ মুখার্জি।

ঋষিকেশ মুখার্জী বলেন, ‘ববি ধর্মে মুসলমান ঠিকই, নিয়মিত নামাজও পড়েন। গত বছর হজ করে এসেছেন। কিন্তু ওর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গটা একেবারেই নেই। ওর মা ছিলেন পূর্ব বঙ্গীয় হিন্দু পরিবারের মানুষ, বোনের বিয়ে দিয়েছে হিন্দু পরিবারে।’

‘ছোট থেকে আমরা কয়েকজন বন্ধু প্রতি শনিবারে নিয়ম করে কালীঘাটের কালী মন্দিরে যেতাম দর্শন করতে, সেখানে ববিও থাকত। আবার ঈদের দিনে আমরা সব বন্ধুরা ওদের বাড়িতে বিছানায় বসে একসঙ্গে আড্ডা মারতাম। আর এটা তো নতুন করে বলার কিছু নেই যে চেতলা অগ্রণী ক্লাবে যে দুর্গাপুজো এখন বিখ্যাত, তার শুরুটাই ববি আর আমরা কয়েকজন বন্ধু করেছিলাম।’

‘ওদের বাড়ির ঠিক সামনে ফুটপাথে শুরু হয়েছিল সেই দুর্গাপুজো,’বলছিলেন ফিরহাদ হাকিমের ছোটবেলার বন্ধু, তার পাড়ারই বাসিন্দা ঋষিকেশ মুখার্জী।

তিনি আরও জানান, বড় নেতা বা তারপরে মন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পরেও কলকাতায় থাকলে নিয়মিত আড্ডায় বসেন বন্ধুদের সঙ্গে, সেখানে রাজনীতির আলোচনা কমই হয়।

‘যখন আড্ডা মারি আমরা, তখন মন্ত্রী বলে মনেই হয় না ওকে। আর পাড়ার ক্লাব অন্ত প্রাণ। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ক্লাবে আসবেই ও। তবে যখন সামনে পুলিশের গাড়ি নিয়ে ওর কনভয় বের হয়, কবেল তখনই ওকে মন্ত্রী বলে মনে হয়,’ বলছিলেন ঋষিকেশ মুখার্জী।

বিদায়ী মেয়র শোভন চ্যাটার্জীকে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বলার পর থেকেই যে নামগুলো উঠে আসছিল সম্ভাব্য মেয়র হিসাবে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ফিরহাদ হাকিমের নাম।

আর তখন থেকেই সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ লিখতে শুরু করেছিলেন যে, একজন মুসলমানকে মেয়র করা হোক। কেউ কেউ এমনও প্রশ্ন তুলেছিলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কেন কলকাতা শহরে কোনও মুসলমান মেয়র হয় নি কেন?

সিপিআইএম দলের নেতা ও সংসদ সদস্য মুহম্মদ সেলিম বলছিলেন, ‘এরকম একটা আলোচনা ফেসবুকে চলছে দু’দিন ধরে। কিন্তু আমার মনে হয়, কলকাতার মতো একটা কসমোপলিটান শহরের নাগরিক বা মেয়র, কোন ধর্ম বা ভাষা গোষ্ঠীর থেকে হবেন, বা এতদিন কেন হয়নি সেটা আলোচনার বিষয় হতে পারে না।’

নতুন ও সাবেক মেয়রের সঙ্গে মমতা

তিনি আরো বলেন, ‘ফিরহাদ হাকিম কর্পোরেশনে দীর্ঘ বছর কাউন্সিলর ছিলেন, তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতেই ক্ষমতাসীন দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হয়। এর মধ্যে তার ধর্মবিশ্বাসকে নিয়ে আসা ঠিক হবে না।’

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সভাপতি মুহম্মদ কামরুজ্জামানের কথাতেই অনেকটা সেই একই সুর।

তিনি বলেন, ‘এটা তৃণমূল কংগ্রেস দলের সিদ্ধান্ত যে তারা কাকে মেয়র করবে। তিনি হিন্দু না মুসলমান, সেটা আলাদা করে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। নিতান্তই একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এটা।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Print Friendly, PDF & Email