আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিলেন মাশরাফি

প্রকাশিতঃ 2:49 pm | November 11, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন দেশ সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আজ রোববার দুপুর পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে নড়াইল-২ সংসদীয় আসনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি।

এ সময় মাশরাফিকে মনোনয়ন ফরম তুলে দেন অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে। ফরমের কার্যাদি সম্পন্ন করে মাশরাফি পূনরায় তা তুলে দেন দলের সাধারণ সম্পাদকের হাতে।

মনোনয়ন কেনার আগে মাশরাফি বিন মর্তুজা সকাল ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে পায়ে ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া চেয়ে নিন তিনি। এসময় তার সঙ্গে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য নাজিম আহমেদ ও নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও প্রমুখ।

গত ৪ অক্টোবর দেশব্যাপী ৪র্থ উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লোহাগড়া উপজেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তিনি মাশরাফিকে নড়াইলের বড় সম্পদ উল্লেখ করে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর নড়াইলের সর্বত্র গুঞ্জন আরো বেগবান হয়েছে।

গত ২৯ মে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ঢাকার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় মাশরাফি ও সাকিবের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, মাশরাফি নির্বাচন করতে পারেন, করলে আপনারা ভোট দেবেন।

সেই ঘোষণার পর নড়াইলের নির্বাচনী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন দেশসেরা ক্রিকেট তারকা মাশরাফি। তারপর থেকে নড়াইলের বাড়িতে গেলেই মাশরাফিকে ঘিরে ছাত্রলীগের একটি অংশ সার্বক্ষণিক ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকা প্রার্থীরা মাশরাফিকে প্রতিদ্বন্ধী মনে করে বিভিন্ন তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্যও দিয়েছেন ইতোমধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করা হচ্ছে মাশরাফির বিরুদ্ধে। মাশরাফির নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সামাজিক কর্মকাণ্ডকেও তারা নির্বাচনে নামার প্রক্রিয়া মনে করে তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন তারা।

তবে এলাকার যুবসমাজ বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন। এমপি হয়েও দলে খেলতে পারেন এমন মন্তব্য করে ক্যাপ্টেন ম্যাশের একজন ভক্ত বলেন, মাশরাফি এমপি হলে হয়তো সে মন্ত্রী হয়ে ক্রীড়ার উন্নয়ন ঘটাবে, নড়াইলও একজন মন্ত্রী পাবে, আমরা চাই সে এমপি হিসেবেই দলে নেতৃত্ব দিক।

স্থানীয়রা জানান, দেশের যুবসমাজের আইকন মাশরাফি নড়াইলে আসলে দলমত নির্বিশেষে সবার সাথেই চলাফেরা করেন, তার কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তি সম্পর্ক অনেক বড়। বন্ধু বৎসল মাশরাফি কখনোই কোন দলের হয়ে কথা বলেননি। নিজের খেলা আর এলাকার গরীব মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। তার পয়সায় দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা এবং প্রকৌশলীতে পড়ালেখা করছেন মেধাবী ছাত্ররা। এলাকার মানুষের কাছে মাশরাফি দিনে দিনে একজন দেবতুল্য মানুষ হয়ে উঠেছেন।

মাশরাফির প্রতিবেশী বন্ধু ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, তার (মাশরাফি) কাছ থেকে ভালোবাসা কিংবা সহায়তা পাননি নড়াইলে এমন অসহায় মানুষের সংখ্যা বিরল। তাইতো তিনি আর্ত মানবতা ও ক্রীড়ার সেবায় গড়ে তুলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন। স্পন্সর জোগাড় করে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলের জন্য ৩ বছরের কোর্স করাচ্ছেন, স্পেশাল জিম তৈরির উদ্যোগও নিয়েছেন। দরিদ্র মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেস, স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করেছেন, নিজের বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়ে চলছে নড়াইল বাসীর সেবা। দলীয় বা সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই তিনি একান্ত প্রচেষ্টায় করেন এসব সেবামূলক কার্যক্রম।

নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী বশিরুল হক বলেন, মাশরাফি তো কখনোই নির্বাচনে আসার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায়নি, সে ইতিপূর্বে যেটা বলেছে সেটা হলো প্রধানমন্ত্রী যদি নির্বাচনের মাঠে নামতে বলেন তাহলে তাকে নামতে হতে পারে, মাশরাফি নির্বাচিত হলে বিশ্বকাপে আমাদের একজন এমপি খেলবে, এটাতো ভালই হবে।

নড়াইল-২ আসনের মনোনয়ন প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আইয়ুব আলী জানান, মাশরাফি সবার উপরে, নেত্রী তাকে মনোনয়ন দিলে আমরা সবাই তার হয়েই ঝাপিয়ে পড়বো, কিন্তু আমার মনে হয় তিনি অসুস্থ তাই প্রধানমন্ত্রী তার জন্য দোয়া চেয়েছেন, এখানে নির্বাচনের কোন ইঙ্গিত নাই।

নির্বাচনে মাশরাফির প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তার বাবা গোলাম মর্তুজা স্বপন বলেন, মাশরাফি কিংবা আমরা কখনোই নির্বাচন নিয়ে ভাবিনি। আমরা কোথাও আগ্রহ প্রকাশ করিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি চায়, তার চাওয়া ফেরত দেয়াতো সম্ভব নয়।
কালের আলো/পিএম

Print Friendly, PDF & Email