ছাত্রলীগ নেত্রী শ্রাবণী শায়লাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়

প্রকাশিতঃ 3:34 pm | January 25, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

ছাত্রলীগের হামলার বিচার, তাদের নামে দায়ের করা ভাংচুর মামলা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে মঙ্গলবার ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দে’র ব্যানারে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয় অবরোধ করে।

বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান একাডেমিক মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য কক্ষ থেকে বের হলে আন্দোলনকারীরা তাকে ঘিরে ফেলে। এ সময় ভিসির পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয় আন্দোলনকারীরা। রুমের সামনে করিডোরে আধঘণ্টার বেশি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আবিদ আল হাসানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে উদ্ধার করে তার কার্যালয়ের নিয়ে যান।

এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থলে আসার নির্দেশ দিলে বিভিন্ন হল থেকে কয়েকশ’ নেতাকর্মী এসে পুরো প্রশাসনিক ভবন ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় তারা।

মারধরের মুখে শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবনসংলগ্ন গেট, প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন গেট গিয়ে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা দফায় দফায় রড ও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এ সময় ইট-পাটকেল, লাথি, কিল, ঘুষি মেরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। প্রহারে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় সাংবাদিকসহ প্রায় ৪০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাসুদ আল মাহাদী, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি তুহিন কান্তি দাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজীব কান্তি, সদস্য সোহাইল আহমেদ শুভ, রবিউল ইসলাম মিম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইভা মজুমদার, প্রগতি বর্মণ তমাসহ আরও অন্তত ৪০ জন আহত হন। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ছবি তুলতে গিয়ে আহত হন ইংরেজি দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরশাদ, নিউ এজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অরণ্য আরিফ, ডেইলি অবজারভারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবদুল করিম, বাংলা ট্রিবিউনের রুবেল, বিডিনিউজের তপন কান্তি রায়সহ আরও অনেকে। তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন।

তবে এতোকিছুর বাইরে আলোচিত বিষয় হলো ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রী অন্য এক সাধারণ নারী শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হয়। ওই নেত্রীর নাম শ্রবণী শায়লা। তিনি কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুকে ছাত্রলীগের নেত্রীর ছবি ফেসবুকে হয়ে যায়। গতরাত থেকে অজস্র ছবি ফেসবুকে ছড়াতে থাকে। যেখানে শ্রাবণীকে দেখা যায় নারী শিক্ষার্থীকে মারধর চুল ধরে টানা ও ওড়না ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে।

তবে ছাত্রলীগ বলছে, ৭-৮ জন বামকর্মী শ্রাবণীকে ঘিরে ফেলে উপুর্যুপুরি পেটে লাথি মারে। তখন শ্রাবণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও আক্রমণকারীরা তাকে ছাড়েনি। পরে ছাত্রলীগের অন্যান্য নারী কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বলা হচ্ছে শ্রাবণীর এপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিলে। সেখানেই আঘাত লেগেছে।

শ্রাবণী শায়লার বাড়ি চারঘাটের থানাপাড়া নামক গ্রামে। ঐতিহ্যবাহী সরদহ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করে শায়লা রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে এইচ এস সি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটে চ্যান্স পেয়ে শায়লা ‘ইসলামী শিক্ষা’ বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে ৫ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত।

Print Friendly, PDF & Email