গ্রাহক হারাচ্ছে গ্রামীণ ফোন, কলড্রপে ক্ষোভ বাণিজ্যমন্ত্রী’র

প্রকাশিতঃ 8:45 pm | October 21, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশে নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তনের সেবা এমএনপি চালু হবার পর সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হারাচ্ছে গ্রামীন ফোন আর বিপরীতে গ্রাহক পাচ্ছে রবি। অন্যদিকে গ্রামীণফোনের ‘কলড্রপ’ নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

রোববার (২১ অক্টোবর) রাতে দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি এ বিষয় নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন।

তিনি বলেছেন, গ্রামীণফোন ব্যবসার জন্য কলড্রপ করে। একটা কলে ৪ থেকে ৫ বার কলড্রপ, এটা বাস্তব সম্মত না। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণফোনকে বেসরকারি খাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গ্রামীণফোনের প্রত্যেকটা কলে ৪ থেকে ৫ বার ড্রপ হয়। এ ব্যাপারে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকেও অনুরোধ করেছি।

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখায় যায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি হঠাৎ কলড্রপ। এছাড়া আমাদের রোমিং করা সিম দেখা যায় বিদেশে একটা ফোন করলে হঠাৎ কলড্রপ। এ বিষয়টি ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা ব্যবসার জন্য কলড্রপ করে। তাও আবার ৪ থেকে ৫ বার। সুতরাং গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এর ব্যবস্থা নিতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, আরও অনেক ফোন কোম্পানি আছে। গ্রামীণফোন অন্যায়ভাবে ব্যবসার জন্য কলড্রপ করবে, এটা বাস্তব সম্মত না।

অন্যদিকে রবিবার (২১ অক্টোবর) টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৮ দিনে ৪৭ হাজার ৯০ জন মোবাইলফোন ব্যবহারকারী অপারেটর পরিবর্তনের আবেদন করেন। এর মধ্যে সফল হন ২৬ হাজার ৮১৭ জন গ্রাহক।

যার মধ্যে প্রথম ১৮ দিনে গ্রামীনফোন পেয়েছে ১৬ হাজার ৯১৬ গ্রাহক। পক্ষান্তরে রবি থেকে ৫ হাজার ৯৭৩ গ্রাহক অন্য অপারেটরে চলে গেছে। গ্রামীণফোন থেকে গিয়েছে ১১ হাজার ৬৭৬ জন আর তাদের নেটওয়ার্কে এসেছে ৪ হাজার ৪১ গ্রাহক।

হিসাবগুলো দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে এমএনপি সেবা চালু হলেও আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

রবি যে গ্রাহক যোগ করেছে তার মধ্যে ৯ হাজার ২৫৮ গ্রাহকই এসেছে গ্রামীণফোন ছেড়ে। এছাড়াও টেলিটক থেকে এসেছে ১৬৫ আর বাংলালিংক থেকে ৭৪৯৩ গ্রাহক রবিতে পোটিং করেছে।

একই সঙ্গে রবি ছেড়ে টেলিটকে গেছে ১৪০, গ্রামীণফোনে ২ হাজার ৬৪৩ ও বাংলালিংকে ৩ হাজার ১৯০ জন গ্রাহক। এই সময়ে রবি ছাড়তে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে ২ হাজার ৬৯৩ জন।

বিটিআরসির হিসাবে দেখা যায়, সবেচেয়ে বেশি গ্রাহক হারানো শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন থেকে ৮ হাজার ৬৪২ গ্রাহক অন্য অপারেটরে যেতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আর ছেড়ে গেছে ১১ হাজার ৬৭৬ গ্রাহক।

গ্রামীণফোন থেকে টেলিটকে গেছে ১২৩, রবিতে ৯ হাজার ২৫৮ এবং বাংলালিংকে ২ হাজার ২৯৫ গ্রাহক। পক্ষান্তরে এই সময়ের মধ্যে গ্রামীণফোন পেয়েছে ৪ হাজার ৪১ গ্রাহক। এই গ্রাহকের মধ্যে টেলিটক থেকে ৪৬, রবি থেকে ২ হাজার ৬৪৩ ও বাংলালিংক থেকে ১ হাজার ৩৫২ জন গ্রাহক গ্রামীণফোনে এসেছে।

তৃতীয় শীর্ষ অপারেটর বাংলালিংক প্রথম ১৮ দিনে গ্রাহক যোগ করতে পারলেও তাদের যে পরিমাণ গ্রাহক অন্য অপারেটরে গেছে তাতে তাদের গ্রাহক সংখ্যা কমেছে। ১৮ দিনে বাংলালিংক ৫ হাজার ৫২৬ গ্রাহক ডোগ করতে পেরেছে। অন্যদিকে অপারেটরটি ছেড়েছে ৮ হাজার ৯১৬ গ্রাহক।

বাংলালিংকে টেলিটক থেকে এসেছে ৪১, গ্রামীণফোন থেকে ২ হাজার ২৯৫ ও রবি থেকে ৩ হাজার ১৯০ জন।

পক্ষান্তরে বাংলালিংক থেকে টেলিটকে গেছে ৭১ জন, গ্রামীণফোনে ১ হাজার ৩৫২ জন, রবিতে ৭ হাজার ৪৯৩ জন। এই সময়ের মধ্যে বাংলালিংক ছাড়তে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে ৬ হাজার ৮৬১ গ্রাহক।

প্রথম ১৮ দিনে এমএনপি সেবায় অন্য অপারেটর থেকে সরকারি একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটকে এসেছে মাত্র ৩৩৪ গ্রাহক। এর মধ্যে গ্রামীণফোন থেকে ১২৩, রবি থেকে ১৪০ এবং বাংলালিংক থেকে ৭১ জন যোগ করেছে অপারেটিরটি।

একইভাবে টেলিটক ছেড়ে গেছে ২৫২ গ্রাহক। এর মধ্যে গ্রামীণফোনে গেছে ৪৬ জন, রবিতে ১৬৫ ও বাংলালিংকে ৪১ জন। তবে টেলিটক ছাড়তে চেয়ে ২ হাজার ৫৯ গ্রাহক আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছে।

প্রথম ১৮ দিনে মোট পোর্টিংয়ের আবেদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৯০টি। এর মধ্যে সফলভাবে অপারেটর পরিবর্তন করতে পেরেছে ২৬ হাজার ৮১৭ গ্রাহক, ব্যর্থ হয়েছে ২০ হাজার ২৫৫ গ্রাহক। আবেদন করেও অপেক্ষায় আছে ১৮ জন।

কালের আলো/এনএম

Print Friendly, PDF & Email