সৎ পুলিশ কর্মকর্তার অনন্য ‘উদাহরণ’ ডিআইজি চৌধুরী মামুন

প্রকাশিতঃ 6:31 am | January 19, 2018

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

শিরোনামটি পড়ে যে কেউ অবাক হতে পারেন। কিন্তু ‘বিস্ময় জাগানিয়া’ হলেও সত্য এমন ‘উপমা’ তাঁর নামের পাশে যৌক্তিক এবং মানানসই বটে! পুলিশে ২৯ বছরের চাকরি জীবনে উচ্চ পর্যায়ে লাভজনক পদে থেকেও রাজধানী ঢাকায় কোন ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক হতে পারেননি। জীর্ণতার ছাপ মুছতে পারেননি সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার শ্রীহাইল গ্রামের বসতভিটারও।

অন্য দশটা সাধারণ শিক্ষার্থীর মতোই তাঁর সন্তান ব্যাচে গিয়ে প্রাইভেট পড়ে। সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে গোটা বাহিনীতেই রয়েছে তাঁর সুনাম। তিনি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি। দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীতে তাকে ধরা হয় সৎ পুলিশ কর্মকর্তার অনন্য এক ‘উদাহরণ’ হিসেবে।

কাড়ি কাড়ি টাকার পেছনে না ছুটে বিপরীত স্রোতে নিজেকে ভাসিয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে নীতির প্রশ্নে তিনি অটল। কাজ করছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে।

পুলিশের ১৯৮৬ ব্যাচের নিভৃতচারী এ কর্মকর্তা সততার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছেন মূলত বাবা’র অনুপ্রেরণায়। আলাপচারিতায় সেই অনুপ্রেরণার কথাই বলছিলেন কালের আলোকে। ‘শৈশবেই আমার বাবা আমাকে একটি কথা প্রায়ই বলতেন। তার একটি ছিল আমার সন্তান কখনো টাকার পেছনে ছুটবে না।

পুলিশে চাকরির সময়ে সব সময় বাবার দেয়া শিক্ষাটাই স্মরণ করেছি। বাকী জীবনটাতেও বাবার এ শিক্ষাকে মাথায় রেখেই এগুতে চাই। আমার নিজের সন্তানদেরও সেইভাবে মানুষ করতে চাই’ অসীম দৃঢ়তায় বিনয়ী এ পুলিশ কর্মকর্তার কন্ঠে উচ্চারণ এমনই।
ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন দীর্ঘদিন সামলেছেন পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জ। ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি হিসেবে যোগদান করেন।

ময়মনসিংহে দায়িত্ব পালনকালে জুয়া ও হাউজিমুক্ত ময়মনসিংহ গড়ে জনমনে প্রশংসিত হয়েছিলেন ডিআইজি মামুন। তাঁর সময়ে অপরাধ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ধরনের অপরাধ নেমে এসেছিল অর্ধেকে। পরে সফলতার অসংখ্য নজির স্থাপন করে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে ডিআইজি অ্যাডমিন হিসেবে বদলী করা হয়।

পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের বর্তমান ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝির ভাষায়-‘ডিআইজিদের ডিআইজি।’ সম্প্রতি তাকে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি করা হয়।

কাজের মাধ্যমেই জনগণের আস্থা ও ভালবাসা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন উদ্যম, পরিশ্রম আর মেধার সমীকরণে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি বিনির্মাণে নীরবে কাজ করে যাওয়া ডিআইজি মামুন। ‘তিনি বলেন, পুলিশ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা পায় মানুষের মন থেকে। এবং তা অসম্ভব নয়। সেটি সম্ভব শুধু কাজের মাধ্যমে। দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্বের গুনে একজন পুলিশ কর্মকর্তা মানুষের মনে আসন করে নেন।’

পুলিশের শতকরা ৮০ ভাগ সদস্য পয়সা খান না এমনটি উল্লেখ করে ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের পুলিশ সার্ভিসে অসংখ্য ভাল লোক আছে। যারা পয়সা খায় না। আবার শতকরা ৮০ ভাগ পুলিশ সদস্যের পয়সা খাওয়ার কোন সুযোগই নেই। কিন্তু এসব বিষয় ফোকাস হয় না’ আক্ষেপ করে বলেন কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে ভূষিত এ কর্মকর্তা।

বলতে থাকেন ‘পুলিশ মানেই খারাপ নয়। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশের কাছে আসে। তারা শুধু চান একটু ভাল ব্যবহার আর কাঙ্খিত সেবা। সেই সেবাটুকু নিশ্চিত করতে পারলেই তারা অনেক খুশি। আমার চাকরি জীবনে সমাজ ও সাধারণ মানুষের চাহিদাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।’

Print Friendly, PDF & Email