ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাজুয়ালটির মুখোমুখি, মাদক বিরোধী অভিযান বেগবান করার প্রত্যয় র‍্যাব ডিজি’র

প্রকাশিতঃ 11:45 pm | October 12, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে চার সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতের ঘটনাকে গত ৫ মাস ধরে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে সবচেয়ে বড় ‘ক্যাজুয়ালটি’ বলেই মনে করেন র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

র‌্যাব প্রধান বলেন, দেশকে মাদকমুক্ত করার প্রত্যয়ে আমাদের অফিসার এবং জওয়ানরা যে পরিশ্রম করছেন, এ প্রথম মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাজুয়ালটির মুখোমুখি হলাম। তবে এ ঘটনায় আমরা মোটেই হতোদ্যম নই, আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।

শুক্রবার রাতে রাজধানীর সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।

এর আগে আহত চার সদস্যের ৩ জনকে (মেজর মেহেদী হাসান, ল্যাঃ কর্পোরাল শহিদুল ইসলাম এবং সৈনিক মোঃ আরিফ ইসলাম) হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম সিএমএইচ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচে আনা হয়।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে চার সদস্য আহতের ঘটনায় আমরা মোটেই হতোদ্যম নই, বরং এ অপারেশনকে আরো বেগবান ও শক্তিশালী করব। মাদক ব্যবসায়ীদের নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা আরো সুদৃঢ় করার চেষ্টা করব’।

তিনি আরো বলেন, আহতদের মধ্যে আমাদের একজন অফিসার আদনান পেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তার অবস্থা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রাম সিএমএইচে তার ছয় ঘণ্টার অপারেশন হয়েছে। বাকি তিনজনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। একজন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, প্রয়োজন মনে করলে আগামীকাল তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, গত ৫ মাসের মাদকবিরোধী অভিযানে আমরা প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক জব্দ করেছি। ১৭ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আপনারা জানেন, এর ফলে বাংলাদেশে মাদকের প্রকোপ অনেকটাই কমে গেছে। প্রকাশ্যে মাদক কেনা-বেচার যে অভিযোগ ছিল এখন আর নেই।

‘কক্সবাজার কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ীদের শক্তভাবে দমন করার পরিপ্রেক্ষিতে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের রুট ও কৌশল পরিবর্তন করেছে। যারা মাদক গ্রহণ করতো, তাদের অনেকেই মাদক ছেড়ে দিয়েছে। মাদক এখন অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য, ১০০ টাকার মাদক ৬-৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জনগণের সহায়তায় যে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে তার সুস্পষ্ট প্রভাব ইতোমধ্যে জনগণ উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। তাই আমরা এটাকে অব্যাহত রাখব, যতোদিন প্রয়োজন মনে করি।’

ঘটনার বর্ণনায় র‌্যাব প্রধান বলেন, ১১ অক্টোবর গভীর রাতে চট্টগ্রামের বিবির বাজার রেলগেইট এলাকায় আমাদের একটা টিম চেকপোস্ট করে তল্লাশি করছিল। দায়িত্ব পালনকালে তারা দেখেন একটি নীল রঙের গাড়ি দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়ে আসছে। তখন র‌্যাব সদস্যরা গাড়িটিকে থামানোর সিগন্যাল দিলে গাড়ি থামিয়ে এক ভদ্রলোক গাড়ি থেকে বের হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি শুরু করে। প্রথমেই আমাদের ২ জন অফিসার গুলিবিদ্ধ হয়।

তখন সঙ্গে থাকা অন্য সদস্যরা পাল্টা গুলি চালালে যে গুলি চালিয়েছে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সেই ব্যক্তি মাটিতে পড়ে গিয়েও আরো তিন রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। তখন আমাদের দুইজন সৈনিক গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ওই গাড়িটি তল্লাশি করে ১২ হাজার ইয়াবা, ১টি বিদেশী পিস্তল, ৪টি ফোন, ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। আমরা ধারণা করছি গাড়িতে আরো প্যাসেঞ্জার ছিল, যারা গুলাগুলির সময় পালিয়ে গেছে। তাদেরকে ধরার চেষ্টা চলছে।’

গত পাঁচ মাস ধরে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাব সদস্যদের এটাই সবচেয়ে বড় ক্যাজুয়ালিটি উল্লেখ করে র‌্যাব প্রধান বলেন, দেশকে মাদকমুক্ত করার প্রত্যয়ে আমাদের অফিসার এবং জওয়ানরা যে পরিশ্রম করছেন, এ প্রথম মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাজুয়ালিটির মুখোমুখি হলাম। তবে এ ঘটনায় আমরা মোটেই হতোদ্যম নই, আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।

এসময় আহত র‌্যাব সদস্যদের সুস্থ্যতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন তিনি।

কালের আলো/এনএল

Print Friendly, PDF & Email